গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-পায়রা রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ডিপি (ঢাকা-পায়রা) রেলওয়ে লিমিটেড নামের যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে, সেটার এ ধরনের কাজে দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। কৌতূহল উদ্দীপক বিষয় হল, যুক্তরাজ্যভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে ঢাকা-পায়রা রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যেই। প্রতিষ্ঠানটির নামই এর প্রমাণ। আরও অবাক করা বিষয়, শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ছিল মোটে ১০০ পাউন্ড, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ১০ হাজার টাকার মতো। রেলপথ নির্মাণের কোনো অভিজ্ঞতা এ প্রতিষ্ঠানের নেই। আর সব মিলিয়ে জনবল নাকি মাত্র ১১ জন!
এরকম একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা-পায়রা রেলপথ নির্মাণে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর কেন করল বাংলাদেশ রেলওয়ে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত মোট ২৪০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এটি রেলওয়ে খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সেক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকার মূলধনী প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের কাজ দেয়াটা অস্বাভাবিক বলেই প্রতীয়মান হয়। আরও একটি অস্বাভাবিকতা হল, এ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ১২ লাখ ডলার বা প্রায় ২৪৫ কোটি টাকা। অথচ দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের রেলপথ নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয় ২৩ কোটি থেকে সর্বোচ্চ ৩১ কোটি টাকা। বিষয়গুলো সরকারের সর্বোচ্চ মহলের জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছি আমরা।
পটুয়াখালীর রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে চালু হয়েছে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। পদ্মা সেতুর পাথর খালাস কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে দেশের তৃতীয় এ সমুদ্রবন্দর। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত নিজস্ব উদ্যোগে এটির যাত্রা শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর এ সমুদ্রবন্দর দক্ষিণ জনপদের মানুষের জন্য নবদিগন্ত উন্মোচন করবে। পায়রা বন্দরকে ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। এ বন্দর পুরোপুরি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। কাজেই শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, সমগ্র বাংলাদেশে, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জন্যও এটি একটি শুভ সূচনা। সেজন্যই ঢাকা-পায়রা রেলপথটি এত গুরুত্বপূর্ণ। গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে এ রেলপথ দেশের রাজস্বের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তাছাড়া এর মাধ্যমে বরিশাল বিভাগ প্রথমবারের মতো রেল সংযোগের আওতায় আসবে। দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। কাজেই এ রেলপথ সুষ্ঠুভাবে ও নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হওয়াটা জরুরি।
ঢাকা-পায়রা রেলপথের নির্মাণকাজ ২০২৪ সাল নাগাদ শেষ হওয়ার কথা। প্রশ্ন হল, পূর্ব অভিজ্ঞতা ও পর্যাপ্ত লোকবলবিহীন একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তা আদৌ সম্ভব কি-না। কারণ অদক্ষতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। এতে প্রকল্প ব্যয় ও দুর্নীতিও বাড়ে। ঢাকা-পায়রা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে শুরুতেই যে অস্বাভাবিক ব্যয় ধরা হয়েছে, তাতে দুর্নীতির আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ বিধি অনুযায়ী আলোচ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ গুরুদায়িত্ব দেয়া হয়েছে কি-না, তা খতিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.