মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিকের সমর্থন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে পারতেন। কারণ, জনসাধারণ তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা পছন্দ করে। গত সোমবার সিএনএন এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযোজনায় ‘দ্য এক্স ফাইলস’ নামের পডকাস্টে ওবামার ওই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী কেউ দুই দফা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের পর তৃতীয়বার প্রার্থী হতে পারেন না। ওবামা ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় আশা ও পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছিলেন। সে কথা উল্লেখ করে সোমবারের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে আমি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন জোগাড় করতে পারতাম। এ ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।’ ওবামার এ বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন তাঁর ধারণা তিনি আমার বিরুদ্ধে জিততে পারতেন। তিনি এমনটা বলতেই পারেন। কিন্তু আমি বলব, মোটেও না!’ বিদেশিদের হাতে মার্কিনদের চাকরি চলে যাওয়া, আইএসের উত্থান এবং ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত আলোচিত স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনাকে ওবামার জন্য দায় বলে উল্লেখ করেন। আগামী ২০ জানুয়ারি ওবামা ক্ষমতা ছাড়বেন। সেদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন ধনকুবের রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে ওবামার দল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে ওবামা হিলারি সম্পর্কে বলেছেন, ‘হিলারি ক্লিনটন কঠিন পরিস্থিতিতে চমৎকার পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তবে ট্রাম্পের দোষ-ত্রুটিগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তা না করে বরং কর্মজীবী শ্রেণির কল্যাণে ডেমোক্রেটিক পার্টির লক্ষ্যের ওপর বেশি জোর দিতে পারতেন।’ মার্কিন ব্যতিক্রমধর্মী নির্বাচনপদ্ধতিতে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টির বেশি জিতে বড় জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু পপুলার ভোট অর্থাৎ নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে হিলারিই এগিয়ে আছেন। তিনি মোট ভোটের ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ এবং ট্রাম্প ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ পেয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ইলেকটোরাল ভোটের ভিত্তিতেই নির্ধারণ হয়। ট্রাম্পের কাছে হিলারির পরাজয় অনেকটাই অপ্রত্যাশিত ছিল। এ ব্যাপারে সাক্ষাৎকারে ওবামার বক্তব্য কিছুটা দার্শনিকসুলভ: ‘পরাজয় কখনোই মজার ব্যাপার নয়।…আমি গর্বিত যে নিজে জনপ্রিয় কাজের চেয়ে সঠিক কাজটা করার চেষ্টা করেছি।’ ওবামা সবাইকে রাজনীতিতে হেরে যাওয়ার অপমানকে খাটো করে না দেখার আহ্বান জানান। ওবামা আরও বলেন, তিনি দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে পরিবর্তনমূলক কাজকর্ম নিয়ে গর্ববোধ করেন। তরুণ প্রজন্মের উদ্যমকে তিনি ধন্যবাদ জানান। বলেন, এখনো সেই উদ্যম বহাল রয়েছে। ওবামার মতে, এই তরুণ প্রজন্ম আগের চেয়ে অনেক বেশি চৌকস, বেশি সহনশীল, বেশি উদ্ভাবনশীল, বেশি সৃজনশীল, বেশি উদ্যোগী। এত কিছুর পরও কেন ট্রাম্প জয়ী হলেন? এ প্রসঙ্গে ওবামা বলেন, সংস্কৃতি আসলেই বদলেছে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত এখনো যুক্তরাষ্ট্রকে সহনশীল, বৈচিত্র্যময় এবং গতিশীল শক্তিশালী দেশ হিসেবে দেখতে চায়। তবে সমস্যা হলো, রাজনীতিতে সব সময় তার প্রতিফলন ঘটে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.