সকালের শুরুটা গোমড়া মুখো আকাশ দিয়ে, ম্যাচের শুরুটা হলো কনকনে হাওয়ার মধ্যে। কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখেই আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। নিজেই সিদ্ধান্তটা সঠিক প্রমাণ করেছেন, পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৩টি উইকেট। অন্য বোলাররাও দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। নিল ব্রুমের অপরাজিত সেঞ্চুরির পরও শেষ বলে ২৫১ রানে অলআউট হয়েছে নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে কখনো জেতেনি বাংলাদেশ। আজ তাই ইতিহাস গড়ার সুযোগ মাশরাফিদের সামনে। এ ম্যাচে বাংলাদেশকে জয়বঞ্চিত করতে রেকর্ড ভাঙতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। নেলসনের স্যাক্সটন ওভালে প্রথমে ব্যাট করে জয়ের একমাত্র ঘটনাটি ২০১৪ সালের। সেবার নিউজিল্যান্ড ২৮৫ রান করে বৃষ্টি আইনে ৫৮ রানে জিতেছিল ম্যাচ। আজ রানটা এর চেয়েও কম। এ মাঠে প্রথমে ব্যাট করে কোনো স্কোরই নিরাপদ প্রমাণ করতে পারেনি কোনো দল। শুরুতেই নাটক। তৃতীয় বলে এলবিডব্লুর আবেদন। বল মার্টিন গাপটিলের ব্যাটে লাগার আগে প্যাড ছুঁয়ে গেছে। বোলার অধিনায়ক মাশরাফি নিজেই। উইকেটকিপার নুরুল হাসানের সঙ্গে একটু কথা বলে রিভিউ নিয়ে নিলেন অধিনায়ক। কিন্তু পল রাইফেলের সিদ্ধান্তটাই সঠিক প্রমাণিত হলো। প্যাডে লাগার মুহূর্তে বল স্টাম্পের বাইরেই ছিল, নট আউট গাপটিল। ইনিংসের ৪৯.৩ ওভার বাকি থাকতেই একমাত্র রিভিউটা নষ্ট করে ফেলল বাংলাদেশ! অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির দুঃখটা একটু বেশিই। পরের বলেই খানিকটা দায় মেটালেন মাশরাফি। চতুর্থ বলটা আর স্টাম্পের বাইরে নয়, একেবারে মিডল ও লেগ স্টাম্পের মাঝে, গাপটিলকে আউট দিতে এবার দুবার ভাবতে হলো না আম্পায়ারকে। শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারাল নিউজিল্যান্ড। এরপরই গোমড়া মুখ কাটিয়ে পরিচিত আলো ঝলমলে রূপে দেখা দিল নেলসন। কিউই ব্যাটসম্যানেরাও ধীরে ধীরে ইনিংস গড়ার দিকে মনোযোগ দিলেন। তবে কেন উইলিয়ামসনকে কখনোই মনে স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি। অভিষিক্ত শুভাশিষ রায়কে একবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেলেও, ১১তম ওভারেই শেষ হয়েছে তাঁর টিকে থাকার লড়াই। তাসকিন আহমেদের বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩৫ বলে ১৪ রান করেছেন সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান উইলিয়ামসন! উইলিয়ামসনের ক্যাচ ধরা সাকিব আল হাসান একটু পরেই দলকে এনে দিলেন আরেকটি উইকেট। নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই এলবিডব্লু করেছেন গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টম ল্যাথামকে (২২)। চতুর্থ উইকেটে নিল ব্রুম ও জিমি নিশাম পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। ৯.৪ ওভারের জুটিতে এল ৫১ রান। যখনি ম্যাচটি বাংলাদেশের লাগামছাড়া হচ্ছে মনে হচ্ছিল, তখনই মাশরাফির চমক। বোলিংয়ে এলেন মোসাদ্দেক হোসেন, পঞ্চম বলেই স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে নিশাম। নুরুলের প্রথম ডিসমিসাল। তাতেও স্বস্তি পেলেন না অধিনায়ক। উইকেতে যে এসেছেন কলিন মানরো। প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিল মানরোর ৬১ বলে ৮৭ রানের ইনিংসটিই। মানরোর দায়িত্বটা তাই মাশরাফি নিজে নিলেন। ইনিংসের সেরা বলটি বরাদ্ধ করলেন মানরোর জন্য। মিডল স্টাম্পের ওপর করা বলটি মানরোর ব্যাতকে ফাকি দিয়ে ভাঙল স্টাম্প। ১০৭ রানে ৫ উইকেট হারাল নিউজিল্যান্ড। তবু টিকে ছিলেন ব্রুম। দারুণ ঠান্ডা মাথার পরিচয় দিয়ে তুলে নিলেন ওয়ানডেতে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি (প্রথম ফিফটিও বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০১০ সালে)। লুক রনকি একটু দেখে শুনে শুরু করেছিলেন। প্রথম ২৩ বলে ৮ রান নেওয়া এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান একটু পরেই ফিরলেন নিজের রূপে। ৪ চার ও ১ ছক্কা মারার পরই অবশ্য শেষ হয়ে গেছে রনকির ইনিংস। তাসকিনের বলে মিড উইকেটে তানবির হায়দারকে সহজতম এক ক্যাচ দিয়ে আউট রনকি। খানিক পর শুভাশিষকে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট উপহার দিয়ে ক্যাচ আউট মিচেল স্যান্টনার। একটু পরে সাকিবের দ্বিতীয় শিকার টিম সাউদি। ব্রুমকে ৯৯ রানে অপরাজিত রেখে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেছেন লকি ফার্গুসনও। অপর প্রান্তে একের পর এক সঙ্গীর আসা যাওয়ার মাঝেও নিজের কাজটা করেছেন ব্রুম। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটিকে রূপ দিয়েছেন প্রথম সেঞ্চুরিতে। শেষ উইকেটে এসেছে ২৩ রান। ৬ বছর পর গত ম্যাচেই প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামা ব্রুমের ১০৭ বলে ১০৯ রানের ইনিংসটাতেই নিউজিল্যান্ডের ইনিংস পেল ভদ্র চেহারা। তানবির হায়দারের বোলিং কিন্তু দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অন্য বোলাররা যেখানে উইকেট তুলে নিয়ে কিংবা রান আটকে চেপে ধরেছে নিউজিল্যান্ডকে, সেখানে অভিষিক্ত এই লেগ স্পিনার উদারহস্তে রান দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। অভিষেকের ঘোর কাটিয়ে উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনাও জাগাতে পারেননি কখনো। ব্যাটিংয়েও তাই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে তানবিরকে। অনেক দিন পর ওয়ানডেতে তিনজন অভিষিক্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর দলে নেই চোট পাওয়া মুশফিকুর রহিম। মুশফিকের জায়গায় অভিষেক হয়েছে নুরুল হাসানের। মোস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকারের জায়গায় অভিষেক হয়েছে পেসার শুভাশিষ ও লেগ স্পিনার তানবিরের।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.