ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কমানো হচ্ছে প্যাকেজ ভ্যাট। গত অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বাড়িয়ে নতুন করে প্যাকেজ ভ্যাট হার নির্ধারণে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ব্যবসায়ী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শীর্ষ কর্মকর্তারা। অর্থমন্ত্রীর ইতিবাচক সাড়া পেলেই এ বিষয়ে শিগগির সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
জানা গেছে, বুধবার সকালে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট পরবর্তী ভ্যাটের সমস্যা নিয়ে এফবিসিসিআই (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) নেতাদের সঙ্গে এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে প্যাকেজ ভ্যাট ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী প্যাকেজ ভ্যাট হার গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় উভয়পক্ষ। এরপর বিকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। সেখানে অর্থমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দেন।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্যাকেজ ভ্যাট পদ্ধতি বাতিলের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তির মুখে সে অবস্থান থেকে সরে এসে চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্যাকেজ ভ্যাট হার শতভাগ বাড়ানো হয়।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য প্যাকেজ ভ্যাট ১৪ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৮ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার, জেলা শহরের পৌর এলাকায় ৭ হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ হাজার এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এরপর আবারও আন্দোলন করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ঢাকা মহানগর এলাকায় দোকানপাট বন্ধ রেখে এবং এফবিসিসিআইর সামনে অবস্থান নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের ব্যানারে বিক্ষোভ করেন। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
প্যাকেজ ভ্যাটের বর্তমান প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ ৭ লাখ টাকা তারাই প্যাকেজ ভ্যাটের আওতাভুক্ত।
এছাড়া অন্য সিটি কর্পোরেশন এলাকার ক্ষেত্রে বিক্রির পরিমাণ ৫ লাখ, পৌর এলাকায় সাড়ে ৩ লাখ এবং দেশের অবশিষ্ট এলাকার জন্য ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হলেই প্যাকেজ ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। প্যাকেজ ভ্যাট গত বছর ছিল ১৪ হাজার টাকা। চলতি বছর বাজেট ঘোষণার পর তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। এখন ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে দ্বিগুণের পরিবর্তে গত বছরের নির্ধারিত ১৪ হাজার টাকা থেকে ২০ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে উভয়পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
সূত্র জানায়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে এখন ২০ শতাংশ বাড়ানো হলে চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্যাকেজ ভ্যাট হার কমবে ৪০ শতাংশ। সে হিসাবে, ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্যাকেজ ভ্যাট দিতে হবে ২৮ হাজার টাকার পরিবর্তে ১৬ হাজার ৮০০ টাকা। একইভাবে অন্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১২ হাজার টাকা, জেলা শহরের পৌর এলাকায় ৭ হাজার ২০০ টাকার পরিবর্তে ৮ হাজার ৬৪০ টাকা এবং দেশের অন্য এলাকার ব্যবসায়ীদের ৩ হাজার ৬০০ টাকার পরিবর্তে ৪ হাজার ৩২০ টাকা প্যাকেজ ভ্যাট দিতে হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্যাকেজ ভ্যাটের হার সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রজ্ঞাপন সংশোধনে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয় অনাপত্তি দিলে শিগগিরই নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের মহাসচিব আবু মোতালেব বলেন, এনবিআরের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে প্যাকেজ ভ্যাটকে নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিবেচনা করে বাস্তবতার নিরিখে টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা বাড়াতে হবে।
যদিও ১০ নভেম্বর সচিবালয়ে ঢাকা চেম্বারের ট্যাক্স গাইড ২০১৬-১৭ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে হবে। তারা দোকান বন্ধ রেখে যে আন্দোলন করছেন, তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাদের দাবি হচ্ছে, ভ্যাট দেবেন না। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভ্যাট আছে এবং থাকবে। তবে রিটার্ন জমার পরিমাণ বাড়লে ভ্যাট হার কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে’।
এরপর ১১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ ভ্যাটদাতা পুরস্কার অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্যাকেজ ভ্যাট নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এটা ঠিক হয়ে যাবে। প্যাকেজ ভ্যাট বিরাট কিছু নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ জানাই ভ্যাটকে সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য। ভ্যাট পদ্ধতিকে এমন করতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা খুশি হন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.