সিলেট নগরে ১০ বছরে বাসাভাড়া বেড়েছে আড়াই থেকে তিন গুণ। বাসা বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কোনো নীতিমালা না থাকায় মালিকেরা ইচ্ছেমতো ভাড়া নির্ধারণ করছেন। নগরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের বেতনের একটি বড় অংশই ভাড়ার পেছনে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তাঁদের অনেক টাকা ভাড়া দিয়ে মেসে থাকতে হচ্ছে। সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার একটি তিনতলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন কায়সার হক। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। তিনি যে ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন, সেটিতে তিনটি শয়নকক্ষ (বেডরুম), একটি ড্রয়িংরুম এবং দুটি শৌচাগার রয়েছে। ভাড়া ১৫ হাজার। ১৮ বছর ধরে তিনি সিলেট নগরে পরিবার নিয়ে বাস করছেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি অন্তত ১৩টি বাসায় ভাড়া থেকেছেন। কায়সার হক বলেন, ১৯৯৮ সালে তিনি যখন সিলেট শহরে আসেন, তখন একই আকারের একটি বাসার ভাড়া ছিল ৫ হাজার টাকা। এর অন্তত চার থেকে পাঁচ বছর পর পুনরায় বাসা ভাড়া বাড়ানো হয়। তবে গত ১০ বছরে বাসাভাড়া অন্তত আড়াই গুণ বেড়েছে। কায়সার তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো নীতিমালা না থাকায় মালিকেরা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াচ্ছেন। তাই বেতনের অর্ধেক টাকা বাসাভাড়ার পেছনেই খরচ হচ্ছে। বাসা ভাড়া বৃদ্ধির প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা নিতে কায়সার হক ছাড়াও গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার নগরের পাঁচটি ওয়ার্ডের অন্তত ৩১ জন ভাড়াটে ও বাসার মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, গত ১০ বছরে বাসাভাড়া পাড়া-মহল্লাবিশেষে আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। নগরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বিভাগীয় শহর হওয়ার কারণে নগরে প্রচুরসংখ্যক সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, হাসপাতালসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের অধিকাংশ শহরের স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাঁরা ভাড়া বাসায় বাস করছেন। এর বাইরে শহরে কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫০ হাজার শিক্ষার্থী ভাড়া থাকেন। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ভাড়াটেদের নিয়ে করপোরেশনের আলাদা কোনো জরিপ কখনোই পরিচালিত হয়নি। তবে হোল্ডিংয়ের হিসাবে নগরে ৫৪ হাজার বাসা-বাড়ি রয়েছে। হোল্ডিং নিবন্ধনের বাইরে আরও অন্তত ৩০ হাজার বাসা নগরে রয়েছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। মহানগর পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শহরে ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি আরও অন্তত আড়াই লাখ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। বাগবাড়ি এলাকার এক ভাড়াটে আবদুস সাত্তার বলেন, ‘বলা নেই কওয়া নেই, হুট করেই বাসাভাড়া বাড়িয়ে দেন মালিক। বছরের শুরুতে এক দফা বাড়ে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বছরের মাঝামাঝিও আরেক দফা বাড়ে।’ বাসাভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা রয়েছে—ভাড়াটেদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে কামালগড় এলাকার একটি বাড়ির মালিক বলেন, ‘সবকিছুরই দাম বেড়েছে, তাই তাল মিলিয়ে বাসাভাড়াও বাড়ছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’ ফ্ল্যাট বাসায় মেস করে ভাড়া থাকেন—এমন সাতজন ছাত্র বলেন, মালিকেরা সচরাচর ছাত্রদের বাসা ভাড়া দিতে চান না ব্যাচলরের অজুহাত দেখিয়ে। এ অবস্থায় যেসব বাসা ভাড়া পাওয়া যায়, তার ভাড়া খুব চড়া। একই আকারের বাসা একটি পরিবারের জন্য যেখানে ১৫ হাজার টাকা, সেখানে ছাত্রদের জন্য ২৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধারণা অনুযায়ী, গত ১০ বছরে আড়াই থেকে তিন গুণ বাসা ভাড়া বেড়েছে। তবে প্রায় সময়ই ভাড়া বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ভাড়াটেরা অভিযোগ-অনুযোগ করে থাকেন। নগরবাসীর এমন অনুযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া বাড়ানো-সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা আসলেই তৈরি করা প্রয়োজন কি না, সেটি বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।’