দলের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল রোববার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক নেতাকর্মী এতে অংশ নেবে। মহাসমাবেশ সফল করতে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা দলে দলে ঢাকার দিকে রওনা দেবেন। মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, এ মহাসমাবেশকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন দলের নেতারা। শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মঞ্চ তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা। ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে মঞ্চ তৈরির কাজ। ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট মূল মঞ্চ, অতিথিদের জন্য ২০ ফুট প্রস্থ ও ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং গণমাধ্যমের জন্য ১৮ ফুট বাই ২৬ ফুট মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও পুরো উদ্যানে প্রায় পঞ্চাশ হাজার চেয়ার বসানো হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ১৫০টি মাইক লাগানো হয়েছে। এরশাদ ও রওশন এরশাদের বিশাল আকৃতির ছবি শোভা পাচ্ছে পুরো মাঠজুড়ে। এছাড়া পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভরে গেছে নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুনে। মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের পুরো এলাকাজুড়ে একাধিক তোরণ নির্মাণ করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জাতীয় পার্টি। মাসজুড়ে প্রস্তুতি : মহাসমাবেশ সফল করার জন্য বিগত এক মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে জাতীয় পার্টি। খোদ পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজ জেলা রংপুরে দুই দফা সফর করে রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। বৃহত্তর রংপুর থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী এবারের মহাসমাবেশে যোগ দেবে। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদও নিজ জেলা ময়মনসিংহের নেতাদের নিয়ে প্রতিনিধি সভা করেছেন। পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার নিজ জেলা বরিশালসহ বৃহত্তর বরিশালের বিভিন্ন জেলা সফর করে জমায়েত বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া তিনি খুলনা ও সিলেট সফর করে এ দুই বিভাগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা করেছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সমাবেশ সফল করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের নির্বাচনী এলাকা ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জে। দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে সমাবেশে জমায়েত বাড়ানোর জন্য দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। এছাড়া ৭২টি সাংগঠনিক জেলার পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলা, গ্রাম থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী এবারের মহাসমাবেশে যোগ দিচ্ছে। মহাসমাবেশ উপলক্ষে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বলেছেন, ১ জানুয়ারি স্মরণকালের বৃহৎ মহাসমাবেশ করবে জাতীয় পার্টি। দেশের প্রায় সব জেলা, উপজেলা, গ্রাম থেকে আমাদের পার্টির নেতাকর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষ দলে দলে এ সমাবেশে যোগ দেবে। সমাবেশে সার্বিক প্রস্তুতি পুরোপুরি শেষ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রস্তুতি : মহাসমাবেশের ভেন্যু পড়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে। তাই সমাবেশ সফল করার গুরু দায়িত্ব পড়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ওপর। সে হিসেবে দক্ষিণের প্রস্তুতি দৃশ্যমান। সমাবেশ সফল করার জন্য এক মাস আগে থেকে মাঠে কাজ শুরু করেছেন দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয়েছে ২২ ডিসেম্বর থেকে। ওই দিন সমাবেশ সফল করার জন্য সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে প্রতিনিধি সভা করে দক্ষিণ জাতীয় পার্টি। সমাবেশের প্রচারের জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পক্ষ থেকে তিন ধরনের অর্ধলক্ষাধিক পোস্টার লাগানো হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে লক্ষাধিক লিফলেট, এছাড়া পাঁচ শতাধিক ফেস্টুন, পাঁচ শতাধিক ডিজিটাল ব্যানার লাগিয়ে মহাসমাবেশের প্রচার চালানো হয়েছে। গুলিস্তান, টিকাটুলি, পোস্তগোলা, জুরাইন, রমনা, বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। অনেক স্থানে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া নগরজুড়ে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। এ ব্যাপারে দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ১ জানুয়ারি হবে জাতীয় রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট। এ দিন আমরা প্রমাণ করব এরশাদই হবেন ক্ষমতায় যাওয়ার নিয়ামক শক্তি। তাই এ সমাবেশ সফল করার জন্য ঢাকা দক্ষিণের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমাদের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা গত ১০ দিন ধরে প্রচার, মিছিল মিটিং করেছে। সমাবেশে আমার নির্বাচনী এলাকা শ্যামপুর কদমতলী থেকে ১৫ হাজার ও ঢাকা দক্ষিণের অন্য থানা থেকে ১৭ হাজার নেতাকর্মী অংশ নেবে। উত্তরের প্রস্তুতি : ঢাকা মহানগর উত্তরের পক্ষ থেকে নগরজুড়ে সমাবেশের জন্য পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সমাবেশে জমায়েত বাড়ানোর জন্য উত্তরের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এছাড়া উত্তরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে প্রায় প্রতিদিনই মিছিল ও পথসভা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উত্তরের সভাপতি এসএম ফয়সল চিশতি বলেন, আমরা যে কোনো মূল্যে ১ জানুয়ারির মহাসমাবেশ সফল করতে চাই। এজন্য আমাদের পক্ষ থেকে যত ধরনের প্রস্তুতি নেয়া দরকার নেয়া হচ্ছে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রস্তুতি : কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির প্রস্তুতির পাশাপাশি মহাসমাবেশে জমায়েত বাড়ানোর জন্য জাতীয় মহিলা পার্টি, জাতীয় যুব সংহতি, জাতীয় ছাত্র সমাজ, শ্রমিক পার্টি, কৃষক পার্টি, স্বেচ্ছাসেবক পার্টি দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করেছে। তরুণ নেতারা সক্রিয় : গত কাউন্সিলের মাধ্যমে অর্ধশতাধিক তরুণ মুখকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই দেয়া হয়েছে। এবারের সমাবেশ সফল করার জন্য এসব তরুণ নেতা ব্যক্তিগতভাবে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছেন। সমাবেশ সফল করার জন্য তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার, ব্যানার লাগিয়েছেন। এছাড়া নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করছেন। এসব তরুণ নেতার পক্ষ থেকে কাল আলাদাভাবে মিছিল নিয়ে অংশ নেবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.