‘ফাস্ট ট্র্যাক’সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৩৬ প্রকল্পে ধীরগতি বিরাজ করার সংবাদ অনাকাক্সিক্ষত। ২ লাখ ১২ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব প্রকল্প ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। অথচ দেখা যাচ্ছে, গত ৭ বছরে কাজ শেষ হয়েছে গড়ে মাত্র ২০ শতাংশ । এ প্রেক্ষাপটে বাকি ৮০ ভাগ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে কিনা, এ ব্যাপারে সংশয় তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, সময়মতো প্রকল্প শেষ না হলে একদিকে প্রকল্পের ব্যয় যেমন বাড়ে, অন্যদিকে প্রকল্পের সুফল থেকে বঞ্চিত হয় দেশবাসী। কাজেই সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিশেষ নজরদারির মাধ্যমে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। পরিকল্পনা কমিশন অবশ্য প্রকল্পে ধীরগতির পেছনে বৈদেশিক পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব, অনাপত্তিপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে দেরি হওয়া এবং যথাসময়ে সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা না দেয়াসহ অন্তত ১০টি কারণ চিহ্নিত করেছে। আমরা মনে করি, ধীরগতির জন্য দায়ী কারণগুলো যেহেতু উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়েছে, এখন সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। আমরা জানি, জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ায় বেশকিছু প্রকল্পকে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি জনগুরুত্বপূর্ণ ও অর্থনীতির জন্য সুফলদায়ক প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে বলে আমরা মনে করি। এ কথা অনস্বীকার্য, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে সরকারি বিনিয়োগ পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যার দ্রুত সমাধান কোন প্রক্রিয়ায় করা সম্ভব, তা খুঁজে বের করার ব্যাপারে যতœবান হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার পর তা নির্দিষ্ট মেয়াদকালের মধ্যে শেষ করা না গেলে রাষ্ট্র আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তো হয়ই, উপরন্তু দাতা সংস্থাগুলোর অর্থের সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এর ফলে তাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থেকে যায়, যা মোটেই কাম্য নয়। অতএব প্রকল্প অনুমোদনের আগে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তবায়নে জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। তা করা না হলে প্রকল্পে বারবার সংশোধনীর ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় এবং এ সুযোগে অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণের মাধ্যমে অর্থ পকেটস্থ করার সুযোগ তৈরি হয়। ফলে দুর্নীতির প্রসার ঘটে। দুর্নীতির কারণে প্রায় ক্ষেত্রেই প্রকল্পের গুণগত মান বজায় রাখা সম্ভব হয় না। কাজেই প্রকল্প কতটা সুন্দর- এটা দেখার আগে দেখা উচিত, প্রকল্পটি বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে কিনা এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা। অনেক সময় দেখা যায়, আর্থিক প্রণোদনামূলক প্রকল্প বা কর্মসূচিগুলো স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নে পরিচালিত হলেও বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিক খাতে ব্যবহৃত না হয়ে ভুয়া, অস্তিত্বহীন ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে আত্মসাৎ করা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে কাজ না করেই টাকা উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া অনেক প্রকল্প প্রণয়নই করা হয় দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের ভাবনা থেকে। বস্তুত কে কত বেশি কমিশন দেবে, তার ভিত্তিতে কার্যাদেশ বণ্টন করা হয়। সেইসঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রকল্প জালিয়াতি, আর্থিক দুর্নীতি, ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরিসহ অভিনব কৌশল আবিষ্কার করে লুটপাট চালানো হয়। দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ করে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো গতিশীল করার মাধ্যমে সেগুলো যথাসময়ে ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করে সরকার উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সচেষ্ট হবে, এটাই প্রত্যাশা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.