ছবির এই ছেলেটির দিকে তাকালে যে কারো অন্তরাত্মা কেঁদে উঠবে। অন্যদের মতো তারও ছিল দু’টি হাত। কিন্তু বোমার আঘাতে উড়ে গেছে তা। এখন বেঁচে আছে কঠিন এক কষ্ট নিয়ে। তার নাম আহমেদ আল খালাফ (১১)। সিরিয়ায় জন্ম তার। দেশে যুদ্ধের কারণে শরণার্থী হয়েছিল তার পরিবার। সেই শরণার্থী শিবিরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে ৩ বছর আগে। তাতে তার তিন ভাইবোন মারা যায়। আহমেদের উড়ে যায় দু’হাত। তারপর থেকে তার এই অবস্থা। অন্যদের মতো স্বাভাবিক জীবন নয় তার। অনেক প্রত্যাশা তার। গত একটি বছর ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে সে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার সর্বশেষ স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণ দিয়েছেন। তাতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিল আহমেদ। সে শিখেছে বাইক চালানো। অংশ নিয়েছে মার্শাল আর্ট ও জিমন্যাস্টিকস ক্লাসে। এই গ্রীষ্ম কাটিয়েছে ফুটবল খেলে। দিন কাটিয়েছে বস্টনের একটি ক্যাম্পের পাশে লেকে সাঁতার কেটে। এখন সে যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করছে। কিন্তু তার মা রয়েছেন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। তার সঙ্গে রয়েছে আহমেদের অন্য চার ভাইবোন। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অভিবাসন ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচনের আগে। তার রোষানলে আহমেদ পড়বে না বলে তার বিশ্বাস। সে বলেছে, এই বিশ্বে অসম্ভব বলে কিছু নেই। আহমেদ চায় তার মাকে তার কাছে নিতে। ট্রাম্প প্রশাসন তা অনুমোদন দেবে বলে তার বিশ্বাস। তার স্বপ্ন মা ও চার ভাইবোনকে নিয়ে পিতার সঙ্গে একত্রে বসবাস করা। বস্টনের একটি পার্কে বলে লাথি দিতে দিতে সে বলেছে, আমি আমার মাকে এখানে কাছে চাই। আমার মনে হয় তাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। অনেক দিন হয় তার কাছ থেকে আমি দূরে। এ কষ্ট আমি আর বহন করতে পারছি না। নিজের দেহের ক্ষত ও পরিবার থেকে আলাদা থাকার পরও তার আশা মরে যায় নি। তাই জোরে দম টেনে নিয়ে সে বুক ফোলায়। তারপর বলে, এই বিশ্বে সবই সম্ভব। আহমেদের পিতার নাম দিরগাম আল খালাফ। তার ছেলের আশার প্রতিফলন ঘটবে কিনা তা এখন নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পের ওপর। তিনি এরই মধ্যে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। আহমেদ ও তার আশ্রয়ের অনুমোদন পেলে তিনি পরিবারের বাকিদের আশ্রয়ের জন্য প্রার্থনা করবেন। তিনি ডনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, আমি আশা করি তিনি সঠিক কাজটিই করবেন। মানুষ যা-ই বলুক আমি আশাবাদী। এ বিষয়ে ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো জবাব দেয় নি। দিরগাম আল খালাফ বলেছেন, তিনি তুরস্কে ফিরে যেতে চান না। কারণ, সেখানে তার অস্থায়ীভাবে অবস্থানের অনুমতি ছিল। যুক্তরাষ্ট্র যদি তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে তাহলে এর বাইরে তার ফিরে যাওয়ার জায়গা একটিই। তাহলো সিরিয়া। সেখানে ফেরার কথা চিন্তাই করতে পারেন না দিরগাম আল খালাফ। তিনি বলেন, সিরিয়ায় আমাদের জন্য এখন আর বাকি কিছুই নেই। আমাদের বাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সরকারের সঙ্গে আমাদের মতো জনগণের কোনো যোগসূত্র নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্র যদি আমাদের আবেদন গ্রহণ না করে তাহলে আমার যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। উল্লেখ্য, ছেলে আহমেদকে নিয়ে ২০১৫ সালের জুনে মেডিকেল ভিসায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। তারপর থেকে সেখানে মুসলিম পরিবারগুলোর সঙ্গে তারা দু’জনে অবস্থান করছেন। জুনে তিনি কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন। এরপর একটি মসজিদে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ পেয়েছেন দিরগাম। শিগগিরই তিনি ড্রাইভার লাইসেন্সের পরীক্ষা দেবেন। তিনি বলেছেন, তার সবচেয়ে ছোট ছেলে তুরস্কে তার মায়ের সঙ্গে রয়েছে। তার অ্যাজমা সংক্রান্ত জটিলতা আছে। তার স্ত্রীর রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ। পরিবারের এই অবস্থায় তিনি নিজে ঘুমাতে পারেন না। তিনি বলেন, সারাক্ষণই আমাকে আবেগ তাড়া করে ফেরে। যদি আমরা সবাই একত্রিত হয়ে এক স্থানে থাকতে পারতাম তাহলে সেটা হতো সবচেয়ে ভালো অনুভূতি। তার ছেলে আহমেদ মাঝে মধ্যে মায়ের সঙ্গে কথা বলে। জানতে পারে তার ভাইবোনগুলোকে নিয়ে তিনি তুরস্কে কতটা কষ্টের ভেতর দিয়ে দিন পাড় করছেন। নিউ ইংল্যান্ডের মুসলিম সম্প্রদায় পরিচালিত একটি দাতব্য সংস্থার ওপর ভর করে বেঁচে আছেন তারা। মায়ের এসব কষ্ট দূর করতে চায় আহমেদ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.