শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ২৮ মাস যেতে না যেতেই সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড বা কেপিপিএল। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ গত সোমবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গতকাল মঙ্গলবার তা বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের আগস্টে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর আগে একই বছরের মে মাসে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। আইপিও বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিল কোম্পানি। এ নিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল ‘মিথ্যা তথ্যে ৪০ কোটি টাকা তোলার প্রস্তাব’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর উচ্চ আদালতে দায়ের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া স্থগিতাদেশের কারণে শুরুতে আটকে যায় কোম্পানিটির আইপিওর চাঁদা গ্রহণ। পরে আবার ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন আদালতের অন্য আরেক বেঞ্চ। উৎপাদন বন্ধের কারণ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অসহযোগিতা ও কাঁচামালের সংকটকে দায়ী করা হয়েছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এনবিআর কেপিপিএলের বন্ড লাইসেন্স স্থগিত করেছে এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু কাঁচামাল আটকে রেখেছে। এ অবস্থায় উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা ছাড়া কোম্পানির কাছে আর কোনো বিকল্প নেই। উৎপাদন বন্ধের খবরে গতকাল শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এদিন প্রতিটি শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ বা ৯০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ টাকায়। আইপিওতে কেপিপিএল প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুতে বিক্রি করেছিল। এখন বাজারে এটির শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে। ২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটি দুর্বল মৌলভিত্তি বা বাজে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের জন্য ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ যথাসময়ে বিতরণ করতে না পারায় গত ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটিকে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়। এদিকে, শেয়ারবাজারের তেজিভাব অব্যাহত রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩৮ পয়েন্টে। লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমলেও তা প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঘরেই ছিল। দিন শেষে গতকাল লেনদেন হয় ১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৫৭ কোটি টাকা কম। ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে ছিল সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ডেসকো। এদিন ডিএসইতে কোম্পানিটির ৮৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ৬ শতাংশ। পাশাপাশি এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪ টাকা ৭০ পয়সা বা প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ টাকা ৮০ পয়সায়। ফলে গতকাল ডিএসইতে দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে। এদিন দরবৃদ্ধিতে শীর্ষে ছিল শমরিতা হাসপাতাল। খাতভিত্তিক লেনদেনে যথারীতি আধিপত্য ধরে রেখেছে প্রকৌশল খাত। মঙ্গলবার এ খাতের লেনদেন হওয়া ৩৩ কোম্পানি সম্মিলিতভাবে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশ দখলে রেখেছে। আর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের দখলে ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ১৭ শতাংশ। এ খাতের দাপুটে অবস্থার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে ডেসকো। দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি প্রায় ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮২৭ পয়েন্টে। আর দিন শেষে সেখানকার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৪ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৬ কোটি টাকা কম।