নুরুল হুদা পলাশ, সাস্কাটুন, সাস্কাচুয়ান, কানাডা।
পজিটিভ। এইটুকু বলেই মুচকি হেসে নাজনীন রিপোর্ট টা অহনার দিকে এগিয়ে দেয়।
কি পজিটিভ? অহনা বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করে। একটু অস্থিরতাও কাজ করে অহনার। কোনো ইনফেকশন?
আরে না, বোকা, তোর ইউরিন টেস্ট এর রেজাল্ট পজিটিভ, নাজনীন হাসতে থাকে।
আহা কি পজিটিভ বলছিসনা কেন? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
তুই প্রেগন্যান্ট। রিপোর্ট টা দেখ। এই বলেই নাজনীন রিপোর্ট টা অহনার দিকে আবারো বাড়িয়ে দেয়।
দেখ শয়তানি করবিনা। অনেক হয়েছে। আমি চললাম। অহনা টেবিল থেকে ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠতে থাকে।
আরে আরে যাচ্ছিস কোথায়? শয়তানি করবো কেন? আচ্ছা আমি কি কখনো তোর এই বিষয়টা নিয়ে ফাজলামো করেছি ? নাজনীন জিজ্ঞেস করে।
আগে করিসনি কিন্তু এখন করছিস। অহনা কিছুটা আদ্র কণ্ঠে কথাটা বলে।
এবার নাজনীন চিৎকার করে উঠে।
অহনা আমি মোটেই ফাজলামি করছিনা। তুই প্রেগন্যান্ট। তুই মা হতে চলেছিস।
এবারে অহনা ধপাস করে চেয়ারে বসে পরে। নাজনীন, তুই কি বলছিস চিন্তা করেছিস?
হ্যা, আমি ঠিকই বলছি। তুই বুঝতে পারিসনি কেন আমি দুইবার করে তোর স্যাম্পল নিয়েছি?
আমার মনে হয় কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। তোর নার্স ভুল স্যাম্পল এনালাইসিস করেছে। একটু ভালো করে দেখ।অহনা বলে।
অহনা, শোন আমি কি সেটা ভাবিনি মনে করিস ? সেই জন্যেইতো দ্বিতীয়বার স্যাম্পল দিতে বললাম। কন্ফার্ম না হয়ে আমি তোকে বলছি? নাজনীন এবারে অহনার একদম কাছে চলে আসে। জড়িয়ে ধরে। অহনা একটু স্বাভাবিক হয়ে বস।তুইতো এটাই চাচ্ছিস কতদিন হলো। এবার তো হয়েই গেলো। আল্লাহ চাইলে কিনা হয়।
তাই বলে আমি ? তাও আবার এই বয়সে ? লোকে শুনলে কি বলবে? অহনার চোখে বিস্ময়।
এই বয়সে মানে ? তুইকি বুড়ি হয়েছিস ? মানে আমাকেও বুড়ি বানাচ্ছিস ? তুইকি গাধা নাকিরে ? তুইওতো ডাক্তার। তোকেই আমার বুঝাতে হবে ? নাজনীন জিজ্ঞেস করে।
না সব ঠিক আছে। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে যে জিনিসটা মনে প্রাণে এমন করে চাইলাম পেলামনা। এর জন্যে কিনা করেছি জীবনে। কিছুতেই কিছু হলোনা। ভেবে দেখ আমি কতবার তোর কাছে এসেছি। তুই টেস্ট করে প্রতিবার একই উত্তর দিয়েছিস। আর গত তিন বছর তো এর আশা একদম ছেড়েই দিয়েছিলাম। ভেবে দেখ গত কয়েক বছরে আমি কিন্তু খুব একটা আসিনি। ইচ্ছে করেই আসিনি। ভেবেছি কি হবে টেস্ট করিয়ে। সেই একইতো রেজাল্ট। আর আজকে তুই বলছিস আমি প্রেগন্যান্ট। অবাক হবোনা ? এটা কি মিরাকেল নয় ?
না এটা মিরাকল না। আমার জীবনে আমি বেশ কয়েকজন মহিলা পেয়েছি যারা তোর চেয়েও অনেক বেশি বয়সে প্রেগন্যান্ট হয়ে আমার কাছে এসেছে। আমার কাছে মোটেও অবাক লাগছেনা। কি বলি শোন, বাসায় যা। ড্রাইভার এসেছে ? নাহলে আমার ড্রাইভার কে বলি তোকে পৌঁছে দেবে। তোর রেস্ট দরকার।
এবারে অহনা চিৎকার করে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। বহুদিনের জমাট বাধা কান্না হঠাৎ করেই যেন বাঁধ ভাঙা বন্যার মতো অহনার চোখ বেয়ে ঝরতে থাকে। নাজনীন কে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন।
নাজনীন অহনার মাথায় হাত রাখে। দে জামিল ভাইয়ের নাম্বার দে। সুখবরটা আমিই দেই।
না না না , কল দিবিনা প্লিস। খবরদার টেক্সট ও করবিনা। জামিলকে জানালে কিন্তু তোকে আমি মেরেই ফেলবো। জামিলকে আমিই বলবো। আমি ড্রাইভার নিয়ে এসেছি। যাচ্ছি। পরে কথা হবে। টেবিল থেকে টিস্যু নিয়ে চোখ মুছে অহনা। দ্রুত বেরিয়ে যায়।
প্রায় চারটা বাজে। বাইরে ঝলমলে রোদ। রোদ ঝলমলে বিকেল বেলা এই চিরচেনা ঢাকা শহরটাকে আজকে অহনার কাছে কেন জানি খুব নতুন মনে হয়। মনে হয় কত বছর এমন একটি সুন্দর বিকেল অহনা দেখেনি। গাড়িতে উঠে ড্রাইভার মঈজ কে বলে ড্রাইভার সাহেব চলেন। মঈজ জিজ্ঞেস করে আপা কোথায় যাবো ?
পাবলিক লাইব্রেরি তে চলেন। মঈজ একটু কনফিউজেড। আট বছর হলো অহনাদের গাড়ি চালায়। আজ পর্যন্ত কোনোদিন তার আপা জামিল সাহেব কে ছাড়া পাবলিক লাইব্রেরিতে যায়নি। যতবার গিয়েছে জামিল সাহেবের সাথেই গিয়েছে। আবারো জিজ্ঞেস করে মঈজ নিশ্চিন্ত হয়, সে ভুল শুনেনি। গাড়ি থেকে নেমে অহনা সোজা ভিতরে চলে যায়। পাবলিক লাইব্রেরির সামনের লম্বা সিঁড়ির এক কোনায় বসে। অহনারও আজকে কেমন জানি লাগে। জামিলকে ছাড়া সে বোধহয় এর আগে কোনোদিনও এখানে বসেনি। একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
হঠাৎ অহনার মনে পরে। আচ্ছা আজকি নভেম্বর এর ১২ তারিখ ? হা তাইতো। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব। সেদিনও তো নভেম্বরের ১২ তারিখ ছিল। এটা কি তবে মিরাকল নয়? আচ্ছা আমি স্বপ্ন দেখছিনাতো? নিজেকেই অহনা নিজে জিজ্ঞেস করে। আসলে এমন স্বপ্ন সে আগেও দেখেছে। অহনা নিশ্চিত হয় না স্বপ্ন নয়। সব সত্যি। আবারও চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে অহনার। কিন্তু না এখানে এখানে সেটা করা যাবেনা। লোকজন কি ভাববে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নেয়। ভাবতে থাকে। সে অনেকদিন আগের কথা। ১৮ বছর। কিন্তু সব মনে আছে। কোনো স্মৃতিই ঝাপসা হয়নি একটুও। বিকেলটি এমনি ছিল। ঠিক এখানে বসেই জামিলকে বলেছিলো অহনা প্রেগন্যান্ট। জামিল কে ফোন করে এখানেই আনিয়েছিলো। ডক্টর এর চেম্বার থেকে সোজা এখানে এসেছিলো অহনা। জামিল খুব অবাক হয়েছিল। এই কথাটা বাসাতেও বলতে পারতে। হুম তা পারতাম। কিন্তু তোমাকে এত্ত বড় একটা নিউজ দেব, সেটা একটা বিশেষ জায়গাতে বসে দিলে ভালো হয়না ? অহনা বলেছিল। জামিল মাথা নেড়েছিলো। তখনও জামিল গাড়ি কেনেনি। রিক্সাতে চড়ে প্রায় সারা ঢাকা শহর ঘুরে মধ্যরাতে ক্লান্ত হয়ে দুজন বাসায় ফিরেছিল। তারপর কত আনন্দেইনা কেটে গেলো কতগুলো দিন। অহনার কোলজুড়ে এলো অনিক।অনিকের চোখ দুটো একদম অহনার মতো। দেখতে দেখতে অনিক বড় হলো। জামিল তার ব্যবসাতে উত্তরোত্তর উন্নতি করতে লাগলো। অহনাও তার ডাক্তারি পেশায় সুনাম অর্জন করতে শুরু করলো। নাজনীন আর অহনা একসাথে পড়তো। ওদের ব্যাচ এ অহনাই ছিল সবচেয়ে মেধাবী। কি আনন্দেইনা কাটছিলো ওদের দিন আর রাত। আস্তে আস্তে অনিক আরো বড় হতে লাগলো। ছোট থেকেই কেমন পাকা পাকা কথা বলতো।
জামিলের সাথে অহনার প্রথম দেখা এখানেই। জামিল নাজনীনের দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই। বলতে গেলে নাজনীনের মাধ্যমেই জামিলের সাথে পরিচয়। নাজনীনের প্রতি অহনা অনেক কৃতজ্ঞ। জীবনে তার দেখা সবচেয়ে ভালো একজন মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যে। জামিলকে অহনার ভালো লাগতো কিন্তু ঠিক ওভাবে কখনোই ভাবেনি। জামিলই একদিন নাটকীয়ভাবে অহনাকে প্রপোজ করে। অহনাও জামিলকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি। জীবনে ভালো একজন জীবন সঙ্গী পাওয়া সত্যি সৌভাগ্যের ব্যাপার। অহনা সেই সৌভাগ্যের পরশমনি সাথে নিয়েই জন্মেছিলো। সুখের দিনগুলো কতইনা দ্রুত পার হয়ে যায়। অনিক দেখতে দেখতে স্কুল এ যাওয়া শুরু করলো। বাসার পাশেই স্কুল। প্রতিদিন রিকসাতে করে অনিককে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অহনা তার চেম্বার এ যেত। তখন সেপ্টেম্বর মাস। রোজার বন্ধের আগে শেষ স্কুল। রিক্সায় অনিক কে নিয়ে অহনা যাচ্ছে। হঠাৎ ঘটে গেলো জীবনের অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা। পিছন থেকে প্রচন্ড একটি ধাক্কা অনুভব করলো অহনা। এরপর আর মনে নেই। জ্ঞান ফিরেছে দুইদিন পর। জ্ঞান ফিরে অহনা আর অনিক কে দেখতে পায়নি। অহনা গত ১০ বছরে এই ব্যাপারটি অন্তত দশ হাজার বার মনে করতে চেয়েছে। কিন্তু ঠিক এইখানে এসে অহনা আর এগুতে পারেনা। এরপরে কি ঘটেছে অহনা ভাবতে পারেনা। বুকের ভেতর কেমন তীব্র একটা ব্যাথা অনুভব হয়। আগে প্রায়ই জ্ঞান হারাতো। কিন্তু এখন সেটা হয়না তবে গা ঘামতে থাকে। অস্থির লাগে। নাহ আর মনে করতে পারছেনা অহনা। ঠান্ডার মধ্যেও গা ঘামছে অহনার।
তারপর কেটে গেছে ১০টি বছর। একটি ঘটনা অহনার জীবনকে ভেঙে চুরে তছনছ করে দিয়ে গেছে। প্রচন্ড কষ্ট বুকে নিয়েও জামিল তাকে সারাক্ষন আগলে রেখেছে। অহনা তার নিজের স্বাভাবিক জীবন থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। ডাক্তারি প্রাকটিস ছেড়ে দিয়েছে। কোথাও যায়নি ঘুরতে। জামিল কত চেয়েছে। দেশের বাইরে যেতে। যায়নি। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপের বাসিন্দা অহনা। যোগাযোগ বলতে জামিল ছাড়া ওই একজনই। ছোটবেলার বান্ধবী নাজনীন। নাজনীন অহনাকে যতখানি মানুষিক সমর্থন জুগিয়েছে তার জন্যে অহনা সারাজীবন নাজনীনের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। সত্যিকারের বন্ধু এমনি হয়। আসলে বিধাতা কেড়ে নিলে সব কিছুই নেয়না। তাহলে হয়তো মানুষ বাচতে পারতোনা।অহনার জীবনে যেমন রয়ে গেছে জামিল আর নাজনীন। নাজনীনের কাছে কতবার গিয়েছে অহনা। শুধু প্রেগন্যান্ট কিনা এইটা নিশ্চিত হবার জন্যে। ভাগ্য বারবারই তার দিকে অপ্রসন্ন থেকেছে। অহনা জেনেছে যে ক্ষত তার হৃদয়ে তৈরী হয়েছে সেই ক্ষত পূরণ হবার নয় কিন্তু আরেকটি সন্তান পেলে হয়তো জীবনটাকে কোনোভাবে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে পারতো। না হয়নি। দিনে দিনে বয়স বেড়েছে। সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা দুটোই কমেছে। জামিল কোনোদিন এই ব্যাপারটি নিয়ে একটি কথাও বলেনি। শুধু লম্বা নিঃশাস নিয়ে মাঝে মাঝে বলতো, অমন করোনা। ভাগ্যে থাকলে অবশ্যই হবে। আল্লাহ চাইলে সব হয়।
আসলেই আল্লাহ চাইলেই সব হয়। এইতো হয়েছে। কি যেন এক অজানা আনন্দে অহনার মন ভোরে উঠে। নিজেকে ঠিক আঠারো বছর আগের মানুষটি মনে হচ্ছে। সেই অনুভূতি সেই চাঞ্চল্য মনের ভিতর। সবকিছুই যেন সেদিনের মতো। আজকেও সেইদিন। একই তারিখ। একই কাহিনী। কিন্তু জামিল নেই। তিন দিনের জন্যে চিটাগাং গেছে জামিল। নাহ তিনদিন অপেক্ষা করতে পারবেনা অহনা। জামিলকে এখনই চাই। জাস্ট নাউ। কিন্তু কিভাবে ? আচ্ছা অহনা কি চিটাগাং চলে যাবে ? সেটা কি ঠিক হবে ? মোবাইল থেকে মঈজ কে ফোন করে। ওপাশে মঈজ। আপা আসবো? না এখনই না। মঈজ সাহেব, ঢাকা থেকে চিটাগাং যেতে কতক্ষন লাগবে ? মঈজ জিগ্গেস করে , কিভাবে যাবেন আপা ? বাস না ট্রেন ? কেন আপনি যেতে পারবেননা ? মঈজ ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় , আপা আমি? হা আপনি। পারবেননা? না মানে আপা অতোদূরে প্রাইভেট কার নিয়ে রাতে যাওয়া কি ঠিক হবে ? বুঝলাম। থাক যেতে হবেনা। আর শুনেন জামিল সাহেব ফোন দিলে এসব কিছু বলবেননা। মঈজ বলে জি আপা। নাহ, মঈজ ঠিকই বলেছে। রাতে ওকে দিয়ে গাড়ি চালানো ঠিক হবেনা। এতো দূরের পথ। তার চেয়ে জামিল ই আসুক।
সিঁড়ি থেকে নেমে অহনা গাড়িতে উঠে। মঈজ গাড়ি চালাতে থাকে। আপা, বাসায় যাবো? অহনা কিছু বলেনা। আজ বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছেনা। ইচ্ছে করছে ঢাকা শহরের প্রিয় সব জায়গা গুলোতে যাবে। বসবে। বাদাম খাবে। চা খাবে। যা ইচ্ছে করবে। আজকে কোথাও হারিয়ে যেতে নাই মানা। কিন্তু একা ? নাহ। একা কোথাও গিয়ে ভালো লাগবেনা। জামিলকে চাই। এখনই চাই। জাস্ট নাউ। কিন্তু কিভাবে ? অহনা জামিলকে ফোন করে। ওপাশে জামিলের কণ্ঠ। জামিল, ঢাকায় চলে আসতো। আজকেই এখনই। ওপাশ থেকে জামিল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কিন্তু কেন? কি হয়েছে ? মাত্রতো আর তিনটা দিন। জামিল তুমি আজকে আসবে এবং এখনই। আচ্ছা আসবো কিন্তু কি সমস্যা বলবেতো? জামিল কথা বাড়াবেনা প্লিজ। আই ওয়ান্ট তো সি ইউ রাইট নাউ। বলেই ফোন রেখে দেয় অহনা। বেচারা জামিল হন্ত দন্ত হয়ে ইতিমধ্যেই হয়তো ঢাকা ফেরার প্রস্তুতি নিতে থাকে।
আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নামে। অহনা মঈজ কে বলে গাড়িটি ঘুরিয়ে আশুলিয়া-সাভার ঘুরে স্মৃতিসৌধ হয়ে আসতে। অহনার ইচ্ছে করে স্মৃতিসৌধের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকদিন পর সূর্যাস্ত দেখতে। নাহ জামিলকে ছাড়া অহনা আজকে কিছুই করবেনা। মঈজ আবার অহনার কথা মতো গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার দিকে যেতে থাকে। সন্ধ্যার সোনালী আলো গাড়ির উইন্ডশীলড গলিয়ে পিছনের সিটে বসে থাকা একজন অপূর্ব সুন্দরী অহনার উজ্জ্বল মুখটিকে আরো বেশি উজ্জ্বল করে তোলে। অহনার এই মুহূর্তে আঠারো বছর আগের ১২ নভেম্বরের সেই বিকেল থেকে আজকের বিকেলটিকে আলাদা করতে খুব কষ্ট হয়।সব কিছুই নতুন লাগে। কেমন একটা রোমাঞ্চ খেলা করে যায় অহনার সারা দেহমন জুড়ে। অহনা ভাবে, আবার নতুন করে সব? সব কিছু? অহনার মনে হয় আচ্ছা মানুষ যদি তার মেমোরি থেকে কোনো একটি বিশেষ সময়কে ডিলিট করে দিতে পারতো। তাহলে অহনা কি তার জীবনের গত ১০টি বছর ডিলেট করে দিতো ? একটু ভাবে। না সেটা সম্ভব না। তাই যদি হতো জীবনের চাওয়া পাওয়া আনন্দ বেদনার হিসেবের খাতা শূন্যই পরে থাকতো। কে জানে তাহলে হয়তো আজকের এই বিকেলটিও এতো বেশি সুন্দর এতবেশি উপভোগ্য হতোনা।থাকনা ঐ দশটি বছর মনের সিন্ধুকে বন্দি হয়ে। অহনার মনে হয় অনিক ফিরে আসছে আবার। জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম একটি অনুভূতি আজকে অহনার মনকে বড় বেশি চঞ্চল করে তোলে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.