অবশেষে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের আহ্বানে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের জেলাব্যাপী ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল বিকাল ৪টায় স্থানীয় বিটিআরআই রেস্ট হাউজে পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের এক যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেয়া শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়না মিয়া। তিনি বলেন বৈঠকটি বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়। বৈঠকে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল , জেলা পরিষদের প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আমরা কোনো শর্ত ছাড়াই জেলা প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি বলে যোগ করেন তিনি। শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব বলেন, জেলা প্রশাসকের গঠিত চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি যানবাহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসকের কাছে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সংঘাতের ঘটনায় মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম মৌলভীবাজার জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ফারুক আহমদ-কে প্রধান করে চার সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এ কমিটি সাতদিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- এডিশনাল এসপি (অপরাধ) মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, শ্রীমঙ্গলের ইউএনও মো. শহীদুল হক ও ওসি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তদন্ত কমিটির সদস্য শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইউএনও মো. শহীদুল হক বলেন, রোববার থেকে তদন্ত কাজ শুরু করবে। যেসব যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো কার কি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা নিরূপণ করা হবে। তারপর দোকানপাটের ক্ষয়ক্ষতি দেখা হবে। আর আহত যারা হয়েছে তাদেরকে বিজিবির পক্ষ থেকে সহায়তার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি সরজমিন দেখে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে প্রতিবেদন দেবে। এই প্রতিবেদনের আলোকে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রহণ করবে। ভোগান্তি চরমে এর আগে ধর্মঘটে গোটা জেলার জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়ে সর্বশ্রেণি-পেশার মানুষজন। এ অবস্থায় শহরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে শান্তি সমাবেশ করা হয়। গতকাল ভোর থেকে সকল প্রকার পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। সকাল থেকেই ট্রাক, কার লাইটেস ও সিএনজির শ্রমিকরা পরিবহন ধর্মঘটের সমর্থনে শহরে খণ্ড খণ্ড মিছিলে গোটা শহর উত্তপ্ত করে তুলে। শহরে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন প্রবেশ করেনি। এমনকি রিকশা ও সিএনজি পর্যন্ত চলাচল করতে দেয়া হয়নি। সেকারণে সর্বস্তরের জনসাধারণের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীরা পড়ে চরম দুর্ভোগে। শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে দোকানপাট খোলার জন্য শহরে মাইকিং বের করে ব্যবসায়ীদের বার বার আহ্বান জানালেও পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের ভয়ে ব্যবসায়ীরা কয়েকটি ফার্মেসি ও খাবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো ধরনের দোকানপাট খুলেননি। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিলে গোটা শহর আতঙ্কের শহরে পরিণত করে তোলে। দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেয়নি পরিবহন শ্রমিকরা। সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে ফিরে যেতে বাধ্য হয় যাত্রীরা। একাধিক স্থানে পুলিশের সামনেই ধর্মঘটকারীরা সড়কে ও শহরের বিভিন্ন স্থানে টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্বরে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ সমাবেশ করছে। শ্রীমঙ্গল ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মামুন চৌধুরী সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি খয়ের খান, লিয়াকত আলী, হেমেন্দ্র পাল, শ্রমিক নেতা ময়না মিয়া, শাহাজানসহ প্রতিবাদ সমাবেশে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য দেন। ওই সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, বিজিবির গুলিতে আহতদের সুচিকিৎসা, ভাঙচুরকৃত ১৭১ গাড়ির ক্ষতিপূরণ ও বিজিবি সদস্যদের উপযুক্ত বিচার না পাওয়া পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। দুপুরের দিকে ওই শ্রমিক সমাবেশ শেষ হয়। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে শহরের চৌমুহনা চত্বরে ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সমাবেশে উপজেলার সর্বস্তরের কয়েক হাজার মানুষ অধীর আগ্রহে উপস্থিত হন। পৌর মেয়র মো. মহসীন মিয়া মধুর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ এমএ শহীদ, জেলা পরিষদের সদস্য বদরুজ্জামান সেলিম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব, ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ লুৎফুর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আছকির মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক এমএ মান্নান, পৌর আওয়ামী লীগের সম্পাদক অর্ধেন্দু কুমার দেব, শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়। এরপরই বিকালে জেলা প্রশাসনের আহ্বানে যৌথ বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা করা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.