সিলেটের হোসনা বেগম। পেশাই তার চুরি করে বেড়ানো। শুধু হোসনাই নয়- সিলেটে রয়েছে শক্তিশালী একটি চোর সিন্ডিকেট। সংখ্যায় তারা ১২ থেকে ১৫ জন। প্রতিদিন সকাল হলেই তারা চুরির সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে নগরীতে। একেক জন ঘুরে বেড়ায় পাড়াময়। বোরকা পরে থাকে। ভদ্রতার যত রূপ সবই আছে তাদের দেহে। কিন্তু আড়ালে তাদের পেশা চুরি করা। গতকাল দুপুরে সিলেটের পাঠানটুলা এলাকার একটি বাসায় চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে হোসনা বেগম নামে এক মহিলা চোর। বাসায় ঢুকে চুরি করার সময় হাতে-নাতেই তাকে ধরা হয়। কিন্তু হোসনা জানে পরিণতি। এ কারণে ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শেষ রক্ষা হয়নি। স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। হোসনা চুরির পাশাপাশি ছিনতাইকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করছে পুলিশ। সিলেটের চিহ্নিত অপরাধীর নেতৃত্বেই রয়েছে মহিলা ছিনতাইকারী ও চোর সিন্ডিকেট। কখনো কখনো পুরুষ-মহিলা মিলে সিএনজি যোগে নগরীতে ছিনতাই করে বেড়ায়। কয়েক মাস আগে নগরীর বাগবাড়ি এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল এক মহিলা ছিনতাইকারী। স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। এ ঘটনার পর আর পুরুষ ও মহিলা ছিনতাইকারীকে একসঙ্গে অপরাধ সংঘটিত করতে দেখা যায়নি। সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ওই সিন্ডিকেট গা-ঢাকা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে মহিলা ছিনতাইকারীদের ‘গ্যাং’ রয়েছে। ওই গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছে সাইফুল নামে এক পেশাদার অপরাধী। সে নিজেও কয়েকটি বিয়ে করেছে। আর তার স্ত্রীরাও জড়িত রয়েছে অপরাধ কর্মকাণ্ডে। স্ত্রীদের নেতৃত্বে সিলেটে মহিলা চোর ও ছিনতাইকারী সিন্ডিকেট রয়েছে। এসব সিন্ডিকেটের মহিলারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিলেট নগর। সিলেটের বিভিন্ন ফাঁড়ি পুলিশের কাছে খবর এসেছে- নগরীতে ইদানীং চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে। দিন-দুপুরে বাসা থেকে মালামাল হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। এসব অভিযোগের কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিল না পুলিশ। নগরীর আখালিয়া, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার, হাউজিং এস্টেটসহ কয়েকটি এলাকায় মহিলা চোরচক্রের উৎপাত ছিল বেশি। গেলো কয়েদিনে ওই সব এলাকায় কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটে। ঘর থেকে হঠাৎ মোবাইল, টাকা-পয়সা চুরির ঘটনা ঘটছে অহরহ। এতে করে ওই এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হইনি। এদিকে, গতকাল আটক করা হয়েছে হোসনা বেগম। হোসনা বেগম জালালাবাদ থানা পুলিশের কাছে নানা অভিনয় করে তার সিন্ডিকেটের কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। গ্রেপ্তারের পর হোসনা জানিয়েছে সে এয়ারপোর্ট এলাকার নোয়াইপাড়ায় বসবাস করে। সে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে বসবাস করেছে। বসবাসের সুবাদে গোটা নগরী তার কাছে চেনা। তবে, আটকের পর স্থানীয়দের কাছে সে জানিয়েছে- তার পেশা চুরি করা। ইতিমধ্যে সে এলাকায় কয়েকটি বাসায় চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই এলাকা তার বিশেষভাবে পরিচিত। তার সঙ্গে সিলেটের মহিলা চোর ও ছিনতাইকারীদের যোগাযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, দুপুরে পাঠানটুলাস্থ পল্লবী আ/এ, সি ব্লকের ১২নং হাজী শফিক মঞ্জিলে বাসার দরজা খোলা পেয়ে হোসনা বেগম ভেতরে প্রবেশ করে মোবাইল ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তা দেখে ফেলেন ওই বাসারই একজন গৃহিণী। এ সময় তার চিৎকার শুনে এগিয়ে আসেন বাসার গৃহকর্তা। এক পর্যায়ে বাসার ভেতরেই তাকে আটকাতে চাইলে সে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বাসার গৃহকর্তা মোটরসাইকেল যোগে ধাওয়া করে পল্লবী রোড থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় হোসনা বেগমকে আটক করেন। আটক হোসনার কাছ থেকে একটি স্যামসাং মোবাইল ফোন ও নগদ ৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। আটকের পর হোসনা বেগম নিজেকে পেশাদার চোর বলে স্বীকার করেছে। জানায়, সিলেট নগরীতেই সে চুরি করে বেড়ায়। গত কয়েক দিন ধরে সে আখালিয়া, পাঠানটুলা এলাকায় চুরি করে বেড়াচ্ছিল। এদিকে, খবর পেয়ে জালালাবাদ থানার এসআই এনামুল এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। সে জানায়, চুরি করার সময় স্থানীয়রা তাকে হাতে-নাতে গ্রেপ্তার করেছিল। আগেও সে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন রাতে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, হোসনা বেগমকে বিকেলে সিলেটের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়িতে চুরি করে আসছিল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.