হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের বাড্ডা প্রান্তের ইউ আকৃতির গাড়ি পারাপার সেতু (ইউলুপ) আগামী জুনের আগে চালুর সম্ভাবনা নেই। ইউলুপটির প্রায় ৬০ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে বলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট লোকজন জানিয়েছেন। নির্মাণকাজের জন্য দুই লেনের গাড়িগুলোকে সরু পথে চলাচল করতে হচ্ছে। এর ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। মূলত বিভিন্ন গাড়ির ইউ টার্ন নিয়ে লেন পরিবর্তনের জন্য ইউলুপ ব্যবহার করা হয়। হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে রামপুরা ও বাড্ডা প্রান্তে দুটি ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ জুন রামপুরা প্রান্তের (দক্ষিণ) ইউলুপটি চালু হয়েছে। রামপুরায় ইউলুপটি নির্মাণের পর যানজট নিরসনে বেশ সাফল্য পাওয়া গেছে। হাতিরঝিল থেকে বাড্ডার দিকে যেতে মেরুল বাড্ডায় চলছে দ্বিতীয় ইউলুপ (উত্তর) নির্মাণের কাজ। গত বছরের ডিসেম্বরে ইউলুপটি চালুর সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মেজর কাজী শাকিল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাড্ডা প্রান্তের ইউলুপটির নির্মাণে দেরি হওয়ার দুটি কারণ। ইউলুপের মূল সড়কের ভূগর্ভস্থ অংশে ডেসকো, বিটিসিএল, তিতাস, ওয়াসাসহ বেশ কিছু পরিষেবা সংস্থার তার ছিল। সেগুলো সরাতে সময় বেশি লেগেছে। আর ইউলুপের ডাইভারশন সড়ক নির্মাণ বিষয়ে মামলাসংক্রান্ত জটিলতা ছিল, সে জন্যও সময় লেগেছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়ন। নির্মাণকাজের দায়িত্বে আছে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। নকশা অনুযায়ী বাড্ডা ইউলুপের দৈর্ঘ্য ৪৫০ ও প্রস্থ ১০ মিটার। প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। হাতিরঝিলের মোড় থেকে রামপুরা সেতু হয়ে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডের দিকে এগোলে মেরুল বাড্ডা। সেখানেই হচ্ছে বাড্ডা প্রান্তের ইউলুপ। গতকাল শুক্রবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইউলুপের একপাশের পাইলিংয়ের কাজ হয়েছে। আরেক পাশের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। নির্মাণকাজের জন্য রাস্তার মাঝখানের বড় অংশ আলাদা করা হয়েছে। এতে দুই লেনের গাড়িগুলোকে সরু পথে চলাচল করতে হচ্ছে। প্রগতি সরণির ব্যস্ত এই অংশে যানবাহনের চাপ থাকায় যানজট তৈরি হচ্ছে। বছর খানেক ধরেই এমন যানজটে ভোগান্তিতে পড়ছেন এলাকাবাসী। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রামপুরায় প্রথম ইউলুপটি নির্মাণের পর যানজট নিরসনে বেশ সাফল্য পাওয়া গেছে। বাড্ডায় এই ইউলুপ নির্মিত হলে রামপুরা, বনশ্রী বা আফতাব নগর যাওয়ার জন্য বিভিন্ন গাড়ি সহজে লেন পরিবর্তন করতে পারবে। এ ছাড়া এয়ারপোর্ট, মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর, গুলশান ও কুড়িল যাওয়ার জন্য রাস্তার লেনটিও হবে ইউ টার্নমুক্ত। যেসব গাড়ির প্রয়োজন হবে, সেগুলো সহজেই ইউলুপ ব্যবহার করে লেন পরিবর্তন করতে পারবে। এর ফলে লেন পরিবর্তন করতে গিয়ে এখন যে যানজটের সৃষ্টি হয়, তখন তা আর থাকবে না। ইউলুপটি চালুর বিষয়ে হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (রাজউক) জামাল আক্তার ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ইউলুপটির প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ। নিচের দিকে কাজ শেষ। এখন ওপরের দিকের কাজটুকু বাকি। জুন মাস নাগাদ ইউলুপটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া হাতিরঝিল প্রকল্পের মেয়াদ চার দফা বাড়ানো হয়। মেরুল বাড্ডা অংশের ইউলুপ নির্মাণসহ হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের বেশ কিছু কাজ এখনো বাকি। নিকেতন অংশে হাতিরঝিল ব্যবস্থাপনা ভবনের নির্মাণকাজ, মগবাজার-তেজগাঁও সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ বাকি। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সরকারের কাছে পঞ্চমবারের মতো আরও দেড় বছর সময় চেয়েছে রাজউক।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.