কোনো ধরনের তথ্য খোঁজার ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন শুধু তথ্যগুলো কোথায় পাওয়া যায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে মূল তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ যে ওয়েবসাইট সবচেয়ে এগিয়ে আছে, তা হচ্ছে উইকিপিডিয়া (http://wikipedia.org)।
উইকিপিডিয়া বিশ্বকোষের ধারণাটাই যেন বদলে দিয়েছে। এমন একটি বিশ্বকোষ, যা তৈরি হবে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্যোগে। যেখানে স্বেচ্ছাসেবকেরাই তৈরি করবেন সমৃদ্ধ একটি তথ্যভান্ডার। আর এর সব তথ্যই থাকবে উন্মুক্ত। তাই আজ দুনিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া। ১৫ জানুয়ারি উইকিপিডিয়ার বয়স হলো ১৬।
২০০১ সালের ১৫ জানুয়ারি দুই ইন্টারনেট উদ্যোক্তা জিমি ওয়েলস ও ল্যারি স্যাঙ্গার মিলে শুরু করেন উইকিপিডিয়া। বর্তমানে উইকিপিডিয়া বিশ্বের জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে আছে। ২৯৫টি ভাষায় উইকিপিডিয়ায় নিবন্ধের সংখ্যা চার কোটিরও বেশি।
উইকিপিডিয়া ও ডিজিটাল ধারা
দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর তথ্যমতে, উইকিপিডিয়া তিনটি ডিজিটাল ধারা তৈরি করেছে, যা এখন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। প্রথমত, সাধারণ ব্যবহারকারী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে স্বউদ্যোগে উইকিপিডিয়ায় তথ্য ও ছবি যোগ করেন এবং সম্পাদনার কাজটিও করেন। দ্বিতীয়ত জ্ঞানভিত্তিক একটি তথ্যসমৃদ্ধ তথ্যভান্ডার অনলাইনেই গড়ে উঠেছে, যার ফলে ২০১২ সালে এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা নিজেদের মুদ্রিত বই প্রকাশ বন্ধ করে দেয়। তৃতীয়ত, আন্তযোগাযোগের মাধ্যমে একটি অনলাইন ভেঞ্চার পদ্ধতি তৈরি করেছে উইকিপিডিয়া। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুক ও অনলাইনভিত্তিক ট্যাক্সি সেবাদাতা উবার এ পদ্ধতিতে কাজ করে যাচ্ছে।
গ্রহণযোগ্যতার দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে আছে উইকিপিডিয়া। যেকোনো তথ্যও উইকিপিডিয়ায় যুক্ত হওয়ার অন্যতম শর্ত থাকে সেটির উইকিপিডিয়ার নীতিমালা অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য কি না এবং সেটি তথ্যসূত্র যুক্ত কি না। উইকিপিডিয়ার স্বেচ্ছাসেবকেরা কাজটি করে থাকেন একটি গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্রের ওপর নির্ভর করে।
১৬ বছর ধরে সমৃদ্ধ হতে থাকা উইকিপিডিয়ার এমন অগ্রগতি বিষয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও উইকিপিডিয়ান রাগিব হাসান বলেন, ‘উইকিপিডিয়ার ১৬ বছর আসলে সারা বিশ্বে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযাত্রার আরও একটি মাইলফলক। জ্ঞানকে মুক্ত করা, আর জনমানুষের বিশ্বকোষ লেখার যে লক্ষ্য নিয়ে উইকিপিডিয়া শুরু হয়েছিল, আজ ১৬ বছর পর সেই লক্ষ্যের অনেকটা কাছে আমরা এগিয়ে যেতে পেরেছি। আর আমাদের মায়ের ভাষা বাংলায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জ্ঞানকোষ লিখতে পেরেছি আমরা এই উইকিপিডিয়ার কল্যাণেই। জনমানুষের লেখা, জনমানুষের জন্য জ্ঞানের আলো ছড়ানো এই উইকিপিডিয়ার অভিযাত্রা আরও জোরদার হোক আগামী দিনগুলোয়, এই শুভকামনা রইল উইকিপিডিয়ার সব পাঠক ও লেখকের জন্য। জ্ঞান হোক মুক্ত, জ্ঞানের আলো ছড়াক সারা বিশ্বে সবার কাছে সবার নিজের ভাষাতেই।’
উন্মুক্ত ছবির ভান্ডার
অনেক প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে উইকিপিডিয়া। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে উইকিপিডিয়ার পাশাপাশি উন্মুক্ত ছবির ভান্ডার হিসেবে গড়ে উঠছে ‘উইকিমিডিয়া কমন্স’ (http://commons.wikimedia.org)। এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত ছবির ভান্ডার, যেখানে ৩৬ লাখেরও বেশি ছবি রয়েছে। প্রতিবছর ছবির এ ভান্ডারটি সমৃদ্ধ করার জন্য সারা বিশ্বে আয়োজিত হয় উইকি লাভস মনুমেন্টস, উইকি লাভস আর্থসহ নানা ধরনের প্রতিযোগিতা। এসব প্রতিযোগিতাও গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ছবি তোলার প্রতিযোগিতা।
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা উইকিপিডিয়াও
নানা ভাষাভাষী মানুষের জন্য সমৃদ্ধ তথ্যভান্ডার হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসেই বর্তমানে ২৯৫টি ভাষায় উইকিপিডিয়া রয়েছে, যার মধ্যে বাংলা উইকিপিডিয়া (http://bn.wikipedia.org) একটি। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা বাংলা উইকিপিডিয়ার বর্তমান নিবন্ধের সংখ্যা ৪৬ হাজারের বেশি। উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলসের তথ্য অনুযায়ী বাংলা উইকিপিডিয়া ডেপথের দিক দিয়ে সারা বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে আছে। নিজেদের মাতৃভাষায় তথ্যসমৃদ্ধ একটি জ্ঞানভান্ডার করার কাজটি বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাভাষীরা কাজ করে যাচ্ছেন। সবার অংশগ্রহণে এগিয়ে যাচ্ছে উইকিপিডিয়ার অগ্রযাত্রা। যার লক্ষ্য বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিজেদের ভাষায় তথ্য সহজে পাওয়ার সুযোগটি তৈরি করে দেওয়া। সে লক্ষ্যে অবিরাম চলছে কাজ।
লেখক: প্রশাসক, বাংলা উইকিপিডিয়া
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.