শোলাকিয়া ঈদগাহে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কোন হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছাড়াই অসীম সাহসিকতার সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অংশ নিয়ে আলোচিত কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুর্শেদ জামান বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া মরণোত্তর বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) পাচ্ছেন শোলাকিয়ার চেকপোস্টে জঙ্গি হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্য কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম ও কনস্টেবল আনসারুল হক। এই তিনজন ছাড়াও শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেয়া বিভিন্ন পর্যায়ের আরো ৬ জন পুলিশ সদস্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসেন ও নায়েক নিকো চাকমা এই দুই জন বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং কনস্টেবল জুয়েল মিয়া, মো. মশিউর রহমান, রবিকুল ইসলাম ও তুষার আহম্মেদ এই চার জন প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। আগামী ২৩শে জানুয়ারি জাতীয় পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদকপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের হাতে এই পদক তুলে দিবেন। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে গত বছরের পহেলা জুলাই রাতে জঙ্গি হামলায় রাজধানীর ডিপ্লোম্যাটিক জোন রক্তাক্ত হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় ৭ই জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। সকাল পৌনে ৯টার দিকে চরশোলাকিয়া সবুজবাগ মোড় পুলিশ চেকপোস্টে বাধা পেয়ে গ্রেনেড, বোমা, চাপাতি ও পিস্তল নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ সময় জীবন তুচ্ছ করে প্রথম প্রতিরোধ গড়েন চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা। এ সময় জঙ্গিদের হামলায় ১৪ পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের তাজা রক্তে নির্বিঘ্ন হয় শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদজামাত। আহতদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কনস্টেবল জহিরুল ইসলামের মৃত্যু হয়। অন্যদের মধ্যে কনস্টেবল আনসারুল হক (২৮), রবিকুল ইসলাম, প্রশান্ত কুমার সরকার, তুষার আহম্মেদ, জুয়েল মিয়া, মো. মশিউর রহমান ও এএসআই মো. নয়ন মিয়াকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে কনস্টেবল আনসারুল হককে ময়মনসিংহ সিএমএইচে নেয়ার পর দুপুরে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ওইদিনই ময়মনসিংহ থেকে গুরুতর আহত ছয় পুলিশ সদস্য রবিকুল ইসলাম, প্রশান্ত কুমার সরকার, তুষার আহম্মেদ, জুয়েল মিয়া, মো. মশিউর রহমান ও এএসআই মো. নয়ন মিয়াকে জরুরীভিত্তিতে ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। শোলাকিয়ায় হতাহতদের মধ্যে নিহত দুই পুলিশ সদস্য কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হককে মরণোত্তর বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং আহত চার পুলিশ সদস্য কনস্টেবল রবিকুল ইসলাম, তুষার আহম্মেদ, জুয়েল মিয়া ও মো. মশিউর রহমানকে প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) প্রদানের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এদিকে শোলাকিয়ার সবুজবাগ মোড় পুলিশ চেকপোস্ট আক্রান্ত হওয়ার পর পরই হামলাকারী জঙ্গিদের ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। অসীম সাহসিকতার সাথে চেকপোস্টেই তারা জঙ্গিদের রুখে দেন। জীবনবাজি রেখে তাদের প্রায় দুই ঘন্টার অভিযান নির্বিঘ্ন করে শোলাকিয়ার বৃহত্তম ঈদজামাত। বিশেষ করে শোলাকিয়া ঈদগাহে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কোন হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছাড়াই বন্দুকযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুর্শেদ জামান পরিণত হন জাতীয় বীরে। এছাড়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এই প্রতিরোধযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান পিপিএম, তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম, তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এসএম মোস্তাইন হোসেন, সদর মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন, পুলিশ লাইন্সের নায়েক নিকো চাকমা প্রত্যেকেই রাখেন বীরোচিত ভূমিকা। বিভিন্ন গণমাধ্যম ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোলাকিয়ায় পুলিশের বীরত্বপূর্ণ এই অভিযানের অনেক ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। শোলাকিয়ায় এই সাহসিকতাপূর্ণ ও বীরোচিত ভূমিকা রাখায় তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এসএম মোস্তাইন হোসেন, কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুর্শেদ জামান ও পুলিশ লাইন্সের নায়েক নিকো চাকমাকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এর জন্য মনোনীত করা হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.