মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধীন এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার গ্যাসের চুলায় আঁচ প্রায় ছিলই না। গতকাল সকালে এই অবস্থা দেখে একটি ফ্ল্যাটের গৃহিণী রীতা দেবনাথ বারবার সংবাদপত্রে চোখ বুলিয়েছেন, গ্যাস না থাকার কোনো ঘোষণা রয়েছে কি না জানতে। আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে তিনি জানতেও চেয়েছেন, রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য গ্যাসলাইন বন্ধ থাকবে মর্মে এলাকায় কোনো মাইকে প্রচার করা হয়েছে কি না; যা তিনি শুনতে পাননি। কিন্তু না, সে রকম কোনো আগাম খবর প্রচারিত হয়নি। তাহলে গ্যাস নেই কেন?
প্রথম আলোয় ফোন করে রীতা দেবনাথ বলেন, গতকাল সকালে চুলায় ভাত বসানোর দেড় ঘণ্টা পরও জল গরম হয়নি। পরে তিনি হাল ছেড়ে দিয়ে বাইরে থেকে খাবার আনিয়েছেন।
শুধু মিরপুরের ১৪ নম্বর নয়, অন্য সেকশনসহ রাজধানীর অনেক স্থানেই গ্যাস-সংকট বেড়েছে। রাজধানীতে গ্যাস কম বরাদ্দ দেওয়ার এবং শীতকালীন স্বল্পচাপের কারণে এটা হচ্ছে বলে তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানি জানিয়েছে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় ৬০ মিলিয়ন ঘনফুটের কম গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল বিকেলে উত্তরা এলাকায় তিতাসের জরুরি নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, জরুরি কাজের জন্য গ্যাসলাইন মেরামত করার বিষয় থাকলে বিজ্ঞাপন দিয়ে বা মাইকে প্রচার করা হয়। কিন্তু এখন অবস্থা এমন, যেকোনো এলাকায় গ্যাসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিষয়টি ঘোষণা দিয়ে বলার মতো জরুরি হলেও বাস্তব কারণেই তা সম্ভব নয়। কারণ, এ সংকটের কথা আগে থেকে জানা যাচ্ছে না। মিরপুরের ২, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর সেকশন, উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর ও দক্ষিণখান, উত্তরখানের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অভিযোগ আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিরপুর ২ নম্বরের মণিপুর, পল্লবী সিটি ক্লাব মাঠের আশপাশের এলাকা, মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক ও আশপাশের এলাকা, শ্যামলী, বরাব মোহনপুরে আগের তুলনায় গ্যাস-সংকট আরও বেড়েছে। এসব এলাকায় অনেকেই গ্যাস সিলিন্ডার কিনে রান্নার কাজ করছেন।
দক্ষিণ ঢাকায়ও গ্যাস-সংকট বেড়েছে। গতকাল এই এলাকার জরুরি নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, মালিবাগ, মগবাজার, সিদ্ধেশ্বরীর কিছু অংশ থেকে গতকালও চুলায় গ্যাসের চাপ না থাকার অভিযোগ এসেছে। প্রায় প্রতিদিন গ্যাস-সংকট নিয়ে অভিযোগ আসছে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া, রাজার দেউড়ি, তাঁতীবাজার, গোয়ালনগর, পোস্তগোলা ও পূর্ব জুরাইন এলাকা থেকে। জানা যায়, রান্নাবান্নায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। দিনের পর দিন এ সমস্যার কারণে সিলিন্ডার ছাড়াও কেউ কেউ বিকল্প হিসেবে কেরোসিনের চুলা, মাটির চুলা বা ছাদে কাঠ জ্বালিয়ে রান্না করছেন।
তিতাস গ্যাস কোম্পানির জরুরি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মো. সেলিম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অনেক অভিযোগ আসছে। যত দূর সম্ভব টিম পাঠিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।