নারায়ণগঞ্জ বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় স্থানীয় থানায় করা জিডি (নন এফআইআর মামলা) ও এ সংক্রান্ত সব বিচারিক নথি, প্রতিবেদন নারায়ণগঞ্জ সিএমএম (চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) আদালত থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমকে আইন অনুসারে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসংক্রান্ত রুলের নিষ্পত্তি করে গতকাল এ আদেশ দেন। আদেশে নারায়ণগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিমকে জিডিসহ বিচারিক নথিপত্র অবিলম্বে সরবরাহ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জের ওই শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় ৬৫ পৃষ্ঠার বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিএমএম) শেখ হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশেই তিনি কান ধরে ওঠবস করেন। তাই সেলিম ওসমান এ ঘটনার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তবে, উপস্থিত জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে সেলিম ওসমান এ নির্দেশ দেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গতকাল ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি হয়। শুনানি শেষে নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছনার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন বলে আদালত উল্লেখ করেন। আদেশে কারও নাম উল্লেখ না করে হাইকোর্ট বলেন, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন, সবাই আইনের অধীন। আদালত আরও বলেন, বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা ওই ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। বিচারের স্বার্থে এটি যথাযথ বলে প্রতীয়মান হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনা সিনিয়র আইনজীবী এমকে রহমান শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপ?ক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। পরে এমকে রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আদালত ঘটনার (শিক্ষক লাঞ্ছনা) সত্যতা পেয়েছেন। এসংক্রান্ত সব নথি নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঢাকার সিএমএম আদালতকে এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটি আদালতই বুঝবে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, বিচারিক তদন্তের প্রতিবেদনে আদালত শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রমাণ পেয়েছেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট এসংক্রান্ত জিডি ও নথিপত্র নারায়ণগঞ্জ সিএমএম আদালত থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশে হাইকোর্ট বলেছেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারেন না। নারায়ণগঞ্জ বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম ধর্মের অবমাননা করেছেন-এমন অভিযোগে গত বছরের ১৩ই মে সকালে ওই স্কুল প্রাঙ্গণে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে তাকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। একই সঙ্গে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে সংঘটিত এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিদ্যালয় কমিটি শ্যামল কান্তিকে সাময়িক বরখাস্ত করলেও পরে তাকে স্বপদে ফিরিয়ে নেয়া হয়। এই ঘটনায় সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত বছরের ১৮ই মে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) হয়ে রুল জারিসহ অন্তর্বর্তীকালিন আদেশ দেন। রুলে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। পরে আদালতের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিলেও ওই প্রতিবেদন প্রত?্যাখ?্যান করে গত ১০ই আগস্ট এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.