টানা ২২ বছর পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া শাসন করা ইয়াহিয়া জামেহ অবশেষে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গেলেন। ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালেও শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহলের চাপে সরে দাঁড়াতে রাজি হন জামেহ।
জামেহ’র সরে দাঁড়ানো অবশ্য শান্তিপূর্ণ হয়নি। ক্ষমতা ছাড়তে তাকে বাধ্য করা হয় এবং তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসিত হয়েছেন। জামেহ’র দেশ ছাড়ার খবরে গাম্বিয়ার রাজপথে আনন্দ মিছিল হয়েছে।
উল্লসিত লোকজন স্লোগান দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা এখন মুক্ত, আমরা আর কারাগারে নেই।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গাম্বিয়া থেকে বিমানযোগে গিনিতে গেছেন জামেহ। গিনি থেকে নিরক্ষীয় গিনিতে যাবেন এবং সেখানে নির্বাসনে থাকবেন তিনি। কয়েক মাস আগে এক টেলিভিশন ভাষণে গাম্বিয়াকে শত বছর শাসনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন জামেহ। তিনি দম্ভ করে বলতেন, ‘শাসনকার্য আমার আর আল্লাহর মধ্যকার ব্যাপার।’
১ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিজয়ী প্রার্থী আদামা ব্যারোকে স্বাগত জানান জামেহ। তবে কয়েকদিন পর সুর পাল্টে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলেন এবং ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু আফ্রিকান নেতাদের হস্তক্ষেপে চাপে পড়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে চলে যাওয়ার ঘোষণা দেন জামেহ।
শনিবার জামেহ টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একবিন্দুও রক্তের প্রয়োজন পড়বে না। তিনি বলেন, আমি ন্যায় বিবেচনা সাপেক্ষে সব গাম্বিয়ানের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জাতির নেতৃত্ব পরিত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি।
আদামা ব্যারো সেনেগালে আছেন এবং সেখানে গাম্বিয়ান দূতাবাসে বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তবে শিগগির গাম্বিয়ায় ফিরে আসার কথা জানিয়েছেন তিনি। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জামেহর আমলে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তে একটি ট্রুথ কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছেন ব্যারো।
ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটসের (ইকোওয়াস) প্রেসিডেন্ট মার্সেল ডি সৌজা জানিয়েছেন, জামেহকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করাতে পশ্চিমা আফ্রিকার দেশগুলোর সেনারা যে অভিযান শুরু করেছিল, তা শেষ হয়েছে। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিতের খাতিরে কিছু সেনা আরও কয়েকদিন থাকবে।
জামেহর বিদায় মুহূর্ত : বিশাল গাড়িবহর নিয়ে বানজুল বিমানবন্দরে আসেন জামেহ। সেখানে তার সমর্থকরা তাকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানায়। লালগালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে সমর্থকদের বিদায়ী অভিবাদন গ্রহণ করেন তিনি। এ সময় সামরিক ব্যান্ড পার্টি সঙ্গীত পরিবেশন করে। বিমানের দরজায় দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআন বের করে তাকে চুমু দেন এবং ভক্তদের বিদায় শুভেচ্ছা জানানোর সময়ও তার হাতে পবিত্র কোরআন ছিল।
বিদায়বেলায় তার অনুসারী সেনা, বেসামরিক ও রাজনৈতিক কর্মীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং অনেকের চোখে জল দেখা যায়। শনিবার দেশ ছাড়ার সময় বিমানে জামেহ ও তার স্ত্রীর সঙ্গী হন গিনির প্রেসিডেন্ট আলফা কোন্ডে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.