সম্প্রতি তসলিমা নাসরিন ‘ও আমার দেশের মাটি’ শিরোনামে একটি লেখা লিখেছেন। এতে এক পর্যায়ে তিনি লিখেছেন- ”দেশত্যাগ শুরু হয়েছে আবার। সব আশার প্রাচীর চুরচুর করে ভেঙে পড়েছে। দেশে অরাজকতা এত তীব্র যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে আজকাল শুধু হিন্দু যাচ্ছে না, মুসলমানও যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে, আসামে আজ বাংলাদেশের মুসলমানের ভিড়। ভারতবর্ষের প্রায় সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে তারা। শুধু সামান্য অন্নবস্ত্রবাসস্থানের জন্য, জীবনের সামান্য নিরাপত্তার জন্য, সামান্য স্বস্তির জন্য ভারতে বসত গড়েছে। ভারতেই শুধু নয়, বাংলাদেশ ছাড়া প্রায় যে কোনও দেশেই, এমন কী অন্য কোনও গরিব দেশেও তাদের বাস করতে আপত্তি নেই।”
কোন তথ্যের ভিত্তিতে, কোন সূত্র থেকে তসলিমা এমন কথা বলছেন তার কোন উল্লেখ নেই। তিনি জানেন না- বাংলাদেশ থেকে অন্ন-বস্ত্রের জন্য কেউ ভারতে যায় না। অতি সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ হচ্ছে ভারতের ১১১টি ছিটমহলে বসবাসকারী ৪০ হাজার বাসিন্দাদের মধ্যে মাত্র ৭৭৯ জন বাসিন্দা ভারতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাও আত্মীয়তার কারনে। জনপ্রতি ৫ লক্ষ রুপি এবং ভারত সরকারের ব্যাপক সুযোগ সুবিধার অফার পাওয়া সত্বেও ৩৯,২২১ জন আগ্রহ প্রকাশ করেননি। বাংলাদেশিরা ভারতে যায় বেড়াতে, যায় কেনা-কাটা করতে, যায় চিকিৎসা করাতে। ভারত সরকার বিষয়টা ভালভাবেই জানে। আর জানে বলেই ভারত বাংলাদেশিদের ভিসা ব্যবস্থায় চরম শিথিলতা এনেছে। এখন চাওয়া মাত্র ভিসা পাওয়া যাচ্ছে, অন অ্যারাইভেল ভিসা দেয়া শুরু হয়েছে। আগামীতে এমন দিন আসবে ভারত যেতে বাংলাদেশিদের জন্য কোন ভিসাই লাগবে না। কেউ কি একটা প্রমাণ দাঁড় করাতে পারেন যে বাংলাদেশ থেকে কেউ কাজ করার জন্য ভারত গেছে বা যাচ্ছে?
ঘটনা এখানে উল্টো। ভারতীয়রা বাংলাদেশে আসে রুজি-রোজগার করতে। হাজার হাজার ভারতীয় চট্টগ্রাম,খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিঘ্নে ব্যবসা করে যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় হাজার হাজার ভারতীয়রা বাংলাদেশে এসে কৃষিসহ নানান কাজ করে থাকে। শুধু ভারতীয়ই নয়; এখন নেপালিরাও রুটি রোজগারের জন্য বাংলাদেশে আসছে। হাজার হাজার নেপালি মেয়ে ঢাকার বিভিন্ন পার্লারে কর্মরত। অনেকে মনে করেন এরা বোধহয় চাকমা বা আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু আসল সত্য হচ্ছে এরা নেপালি এবং অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছে। মিয়ানমারের লক্ষ লক্ষ শরণার্থী বাংলাদেশে বসবাস করছে; ভারতে যায়নি। একসময় বাংলাদেশে বসবাসকারী বিহারীরা তাদের স্বপ্নের দেশ পাকিস্তান যাওয়ার জন্য আহাজারি করতো। এখন তারা বাংলাদেশে থেকে যেতে চায়। সবাই জানে বাংলাদেশে একজন রিকশা চালক কমপক্ষে এক হাজার টাকা রোজগার করে প্রতিদিন। শহরে বা গ্রামে বাসা-বাড়িতে কাজ করার জন্য ১০/১২ হাজার টাকা বেতন দিয়েও আজকাল লোক পাওয়া যায় না। অতএব বাংলাদেশের মানুষ অন্ন-বস্ত্রের জন্যে ভারত যায় এ ধরনের কথা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
আমার মনে হয় তসলিমা কখনও আসাম যাননি। আসাম সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন বলেও মনে হয় না। জানলে তিনি বলতেন না যে ‘আসামে আজ বাংলাদেশের মুসলমানের ভিড়’। তিনি জানেন না আসামের বিধানসভায় প্রতিবার ২৫/২৬ জন বাঙালি মুসলমান এমপি পদে মনোনয়ন পেয়ে থাকেন। তিনি জানেন না সিলেটের একটি সাবডিভিশন আসামের অর্ন্তভূক্ত। তিনি জানেন না ভারত ভাগ হওয়ার পূর্ব থেকে আসামের বাঙালি মুসলমানরা প্রতিষ্ঠিত। তিনি জানেন না ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ আসামেরই সন্তান।
আজ প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। বাড়ি, গাড়ি, ক্যারিয়ার, ব্যবসা, ব্যাংক ব্যালেন্স, সুখ-শান্তি, জীবনের এত্তসব নিরাপত্তা থাকার পরও এমন কোন বাংলাদেশি কি আছেন যিনি দেশে ফিরে যেতে চান না! কিন্তু কেন? কারণ একটাই- আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশ শান্তির দেশ। আমাদের দেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। কবির ভাষায়- ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি’।
সাম্প্রতিককালে তসলিমার লেখালেখিতে বুঝা যাচ্ছে তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতির খবর রাখেন না অথবা বিশ্বাস করেন না। বিষয়টা খুবই স্পষ্ট যে, (১) তিনি একটা বিতর্ক তৈরির জন্য লেখাটি লিখেছেন। (২) কোন সুবিধা প্রাপ্তির জনে্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুন্ন করার জন্য তিনি কোন অশুভ শক্তির সাথে কাজ করছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.