বগুড়া পুলিশ শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে মাছুমা খাতুন নামে জেএমবির এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত মাসুমা ২০১২ সালে বগুড়ায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেএমবির সামরিক শাখা প্রধান রাইসুল ইসলাম খান ফারদীনের স্ত্রী। বগুড়ার শেরপুরে গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত ২ যুবকের মধ্যে একজন ফারদীন। এতদিন তার পরিচয় অজ্ঞাত ছিল। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার জোরবাড়িয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম খানের ছেলে। জঙ্গী ফারদিন বগুড়ার শাজাহানপুর থানার কামারপাড়া গ্রামের জেএমবির সক্রিয় সদস্য মোস্তাফিজার রহমান ওরফে বোমা শাকিলের ভগ্নিপতি। পুলিশ জঙ্গী ফারদিনের স্ত্রীকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করেছে।
রবিবার দুপুরে প্রেসব্রিফিং-এ বগুড়া পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান অজ্ঞাত জঙ্গির পরিচয় নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন। পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে প্রেসব্রিফিং-এ তিনি আরও জানান, গত ৩ এপ্রিল শেরপুরের গাড়ীদহে গ্রেনেড বিস্ফোেণে ২ যুবক নিহত হয়। এ ঘটনার পর পরই পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সিরাজগঞ্জের জামুয়া গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের পুত্র তরিকুল ইসলাম জুয়েলের পরিচয় উদ্ধার করলেও অপর জঙ্গীর পরিচয় জানতে পারেনি। অবশেষে পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ওই ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত ও অনুসন্ধান অব্যহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে নিহত অজ্ঞাত জঙ্গির শ্বশুরবাড়ির সন্ধান পায়। সেই অনুযায়ী পুলিশ সদস্যরা শাজাহানপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে আব্দুল বাকী প্রাং এর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার মেয়ে মাছুমা আক্তার (২৫)-কে গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদকালে নিহত অজ্ঞাত জঙ্গীর ছবি দেখালে সে পুলিশের কাছে নিহত জঙ্গীকে স্বামী হিসেবে চিহ্নিত করে।
পুলিশ জানায়, নিহত জঙ্গির পারিবারিক নাম রাইসুল ইসলাম খান রাসেল হলেও তিনি বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। ফারদীন, নোমান, সজল, নাম ধারণ করলেও তিনি ফারদিন নামে জেএমবির কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ফারদীন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন জেএমবির সাথে সম্পৃক্ত হয়। তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেএমবির সামরিক শাখা প্রধান ছিলেন। জেএমবির সূত্র ধরেই শাজাহানপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে আব্দুল বাকী প্রাং-এর ছেলে মোস্তাফিজার রহমান, মোস্তাক, শাকিল, বোমা শাকিল, নজরুল ইসলামের সাথে পরিচয় ঘটে। পরবর্তীতে ২০১২ সালে নিহত জঙ্গি ফারদীন অপর জেএমবির সদস্য মোস্তাফিজারের ছোট বোন মাছুমা খাতুনকে বিয়ে করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গত ৩ এপ্রিল শেরপুরের গাড়ীদহে গ্রেনেড বিস্ফোরণে শনাক্তকৃত জুয়েলের সাথে ফারদীন নিহত হয়। ফারদীনের স্ত্রীর বড় ভাই মোজাহিদও জেএমবির সক্রিয় সদস্য। নিহত ফারদিনের স্ত্রী মাছুমা খাতুনও জেএমবির সাথে জড়িত। ফারদিন এবং তার শ্বশুরবাড়ির সবাই নিষিদ্ধ জেএমবির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। বগুড়াসহ অত্র অঞ্চলে জেএমবির মূল উৎপাটনে বগুড়ার পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুজ্জামান ফারুকী, মুনিরা সুলতানা, মাহফুজুল ইসলাম আল আসাদ, সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, সদর থানার ওসি আবুল বাসার উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩ এপ্রিল রাত ৯টায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের জুয়ানপুর কুটির ভিটা গ্রামের মাহবুবুর রহমানের একতলা বাড়িতে বিস্ফোরণে ২ যুবক নিহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ পরের দিন সোমবার ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২০টি গ্রেনেড, বোমা ও ককটেল তৈরির সরঞ্জামাদি, ৪টি বিদেশি পিস্তল, ৬টি ম্যাগজিন, মোটরসাইকেল, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার রশিদ উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকে জেলা পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। মাহবুবুর রহমানের মালিকানাধীন বাড়ি প্রায় ৫-৬ মাস আগে নওগাঁর সিএনজি চালক জনৈক মিজানুর রহমান ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। ওই বাড়িতে নিহত ২ জঙ্গী পরিবারসহ বসবাস করছেলেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.