বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরির দায় আবারো অস্বীকার করল মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক বা সংক্ষেপে ফেড। ফেড বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঠানো নির্দেশনাগুলো সঠিক (অথেনটিক) হওয়ায় অর্থ ছাড় করা হয়েছে। মোট ৩৫টি আদেশের মাধ্যমে অর্থ ছাড় করার জন্য আদেশ পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। পাঁচটি আদেশের বিপরীতে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের অর্থ স্থানান্তরের আদেশে প্রক্রিয়াগত কোনো সমস্যা ছিল না। বাকি ৩০টি আদেশ সঠিক পদ্ধতিতে না করায় তা আটকে দেয়া হয়। এ কারণে বড় ধরনের আর্থিক তি থেকে বেঁচে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আটকে দেয়া আদেশগুলোতে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানান্তরের জন্য বলা হয়েছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ক্যারোলিন ম্যালোনির কাছে লেখা এক চিঠিতে নিউ ইয়র্ক ফেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট থমাস বাক্সটার এ দাবি করেন। স্মরণকালের ভয়াবহ এ সাইবার দুর্ঘটনা ফেড কিভাবে দেখছে জানতে ক্যারোলিন ম্যালোনি গত ১৪ এপ্রিল আইনি চিঠি দেন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ককে। সেই চিঠির উত্তর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক ফেড। চিঠিতে বাক্সটার বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন অনুসরণ করায় পাঁচটি আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ স্থানান্তরের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। বাকি ৩০টি অনুরোধ সঠিক পদ্ধতিতে না করায় তা আটকে দিয়ে মোট ৯৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরির হাত থেকে রা করা হয়। ফেডের এই কর্মকর্তা চিঠিতে আরো বলেন, নিউ ইয়র্ক ফেডের লেনদেন প্রক্রিয়াটির পদ্ধতি এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে পরীা-নিরীা করে গ্রাহকের চাহিদামতো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। কার কাছে অর্থ পাঠানো হচ্ছে তা-ও বিচার-বিবেচনা করা হয়। কিন্তু অর্থ ছাড় করতে সুইফটের মেসেজের মাধ্যমে সঠিকভাবে আদেশ এলে তা বন্ধ করা হয় না। তবে প্রতারণা ঠেকাতে অন্যান্য ব্যাংকের মতো আমরাও সুইফট কোড যাচাই করে দেখি। সুইফট থেকে নিশ্চিত বার্তা এলে তা যাচাইয়ে অন্য কোনো পদপে নেয়া হয় না। তিনি আরো বলেছেন, বিদেশী অ্যাকাউন্টগুলো বেশির ভাগ সময়ই নিউ ইয়র্ক ফেডকে অর্থ স্থানান্তরের আদেশগুলো ম্যানুয়ালি নয় বরং স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠিয়ে থাকে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন ফেডের এই কর্মকর্তা। অন্য দিকে, সুইফট কর্তৃপও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দিয়েছে, সুইফট সিস্টেম হ্যাক হয়নি। এতে তাদের কোনো দায় নেই। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়ে যায়। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করছে, এর মধ্যে প্রায় দুই কোটি মার্কিন ডলার শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরত আনা গেছে। আর আট কোটি ১০ লাখ ডলার রয়েছে ফিলিপাইনে। কিন্তু এই প্রথম ফেডারেল রিজার্ভ বলছে, সেদিন ৯৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সাত হাজার ৬০৮ কোটি টাকা স্থানান্তরের জন্য আদেশ দেয়া হয়েছিল। ফিলিপাইনের পত্রিকাগুলো বলছে, সেদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এ পরিমাণ অর্থ না থাকায় ফেডারেল রিজার্ভের সন্দেহ হয়। পরে সেই অর্থের ছাড় আটকে দেয় ফিলিপাইন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই বলেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করছে, অর্থ ছাড়ে ৩৫টি আদেশ পাঠানো হয়েছিল ফেডারেল রিজার্ভে। কিন্তু তদন্ত দল কম্পিউটারের ফরেনসিক তদন্ত করে দেখতে পায় আদেশ গিয়েছিল ৭০টি। এসব আদেশে টাকা স্থানান্তরের নির্দেশ ছিল প্রায় আট হাজার কোটি টাকার। এ পরিমাণ অর্থ ফেডারেল রিজার্ভে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে সেই দিন ছিল না। এ কারণে লেনদেনে সন্দেহ হয় ফেডারেল রিজার্ভের।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.