বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) শিল্প খাতে ব্যবহার্য ক্যাপটিভ পাওয়ারের গ্যাসের দাম এক লাফে ১৩০ শতাংশ বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এক বছরেরও কম সময় আগে গত বছর সেপ্টেম্বরে ক্যাপটিভ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় শতভাগ অর্থাৎ দ্বিগুণ। আর এবার দ্বিগুণেরও বেশি। শিল্প খাতে সরবরাহের গ্যাসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানোর কারণ আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সরকার কি ব্যবসা-বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে চাইছে? নাকি তারা দেশের শিল্প খাত ধ্বংসের কোনো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়েছে? এ ধরনের প্রশ্ন ওঠার কারণ হল, সরকার শিল্প-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না বলে শিল্প মালিকরা বাধ্য হয়েই ক্যাপটিভ পাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় এই গ্যাসের দাম ১৩০ শতাংশ বাড়ানো হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে।
ক্যাপটিভ পাওয়ারের গ্যাসের দামের সঙ্গে দেশের প্রধান রফতানি খাত গার্মেন্ট শিল্পসহ সামগ্রিক শিল্প খাত তথা ব্যাপক কর্মসংস্থানের প্রশ্ন জড়িত। দাম ১৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় মার খাবে। ফলে অনেক শিল্প মালিক তাদের কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। বেকার হয়ে পড়বে বিপুলসংখ্যক কর্মী। তাছাড়া ক্যাপটিভের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে উদ্যোক্তারা নতুন শিল্প স্থাপনে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে রুদ্ধ হয়ে পড়বে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথও। কাজেই ক্যাপটিভ গ্যাসের দাম ১৩০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এমনিতেই দেশের শিল্প খাত রয়েছে নানা ঝুঁকিতে। গুলশানে জঙ্গি হামলার প্রভাব পড়েছে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর। ওই হামলার পর অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীদের বিদেশে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়া এবং বিশ্ববাজারে পোশাকের দরপতনের কারণেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তাছাড়া দেশের শিল্প খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না বললেই চলে। ফলে ব্যাংকে অলস টাকা পড়ে আছে। রেমিট্যান্সও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যেও রফতানি আয়ে মোটামুটি ধারাবাহিকতা বজায় আছে। কিন্তু এখন ক্যাপটিভ পাওয়ারের গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্প কারখানায় ধস নামবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
আমরা মনে করি, যতদিন শিল্প খাতে ক্যাপটিভের প্রয়োজন না ফুরিয়ে যাচ্ছে, ততদিন এ খাতে সরবরাহের গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা দরকার। গ্যাস খাতে সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হয় না। এ খাতে কোনো লোকসানও নেই। তাহলে সরকারের এমন ব্যবসা-অবান্ধব নীতির হেতু কী? বস্তুত সরকারের জ্বালানি নীতিটিই ব্যবসা ও জনবান্ধব নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে পড়ে গেলেও সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে অযৌক্তিকভাবে। ঘন ঘন গ্যাসের দাম বৃদ্ধিও অযৌক্তিক। এ সবকিছুর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা ও বিনিয়োগ তথা সার্বিক অর্থনীতিতে। এ অবস্থায় আমরা মনে করি, সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকারের উচিত ক্যাপটিভ পাওয়ারের গ্যাসের দাম না বাড়ানো।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.