২০১৪ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে পড়তে আসা এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বাংলাদেশি নাবালক ছাত্রকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বীরভূমের সিউড়ি জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মহানন্দ দাস এই দণ্ডাদেশ দেন। এ রায়ের পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে নির্যাতিতা ওই ছাত্রীকে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ছাত্র সফিকুল ইসলামের বর্তমান বয়স ১৯। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার দাদপুর গ্রামে।
রায় ঘোষণার পর এই মামলার সরকারপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ সমিদুল আলম জানান, দোষী সাব্যস্ত হওয়া বাংলাদেশি ছাত্র সফিকুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৪ ধারায় সফিকুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড, ৩৪২ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড, ৩৫৪ বি ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং এক হাজার রুপি জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরো ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় সফিকুলকে সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভারতীয় দণ্ডবিধির সেকশন ফোর অব দ্য বক্স ধারা মতে দোষীকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ১০ হাজার রুপি জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সৈয়দ সমিদুল আলম বলেন, দোষীকে যাবজ্জীবন কারদণ্ডই ভোগ করতে হবে। অন্যদিকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৭২ ধারা মতে নির্যাতিতাকে রাজ্য সরকারের তরফে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এই ক্ষতিপূরণের অর্থ নির্যাতিতার হাতে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বুধবার সিউড়ির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মহানন্দ দাস ২০১৪ সালের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত বাংলাদেশের ছাত্র সফিকুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করেন। জানা গেছে, ভারতীয় আইনের ২০৯ নম্বর রুল অনুযায়ী বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের বিচারের প্রক্রিয়াটি প্রতি মুহূর্তে বাংলাদেশি দূতাবাসকে জানানো হয়েছে।
২০১৪ সালের আগস্ট মাসে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী লাগোয়া গুরুপল্লির নিজের ভাড়া ঘরে ওই ছাত্রীকে সহায়তা করার নামে ডেকে এনে ধর্ষণ করেন বাংলাদেশের নাবালক ছাত্র শফিকুল ইসলাম। ঘটনার সময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ আর ওই ছাত্রীর বয়স ছিল ১৬ বছর।
জানা যায়, মাধ্যমিক পাস করে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বভারতীতে পড়তে আসে ওই ছাত্রী। এখানেই সফিকুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। বাংলাদেশের বাসিন্দা হওয়ায় স্বভাবতই ওই ছাত্রীর সাহায্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সফিকুল। এরপরই ২০১৪ সালে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, শফিকুল ধর্ষণের ছবি নিজের মোবাইল ফোনে তুলে রেখে ছাত্রীটিকে ব্ল্যাকমেল করতেন। আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে ছাত্রীটি জানায়, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ওই ছবির ভয় দেখিয়ে গুরুপল্লির ঘরে তাকে প্রায় দিনই যেতে বাধ্য করতেন শফিকুল। এইভাবে মানসিক টানাপড়েনে থাকতে থাকতে একদিন ছাত্রীটি তার বাংলাদেশের বাড়িতে মাকে ফোন করে সবকিছু জানায়। এরপর ওই নাবালিকার পরিবারের তরফে শান্তিনিকেতনে এসে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বোলপুর থানায় অভিযোগ জানানো হয়। ৬ ডিসেম্বর শফিকুলকে গ্রেপ্তার করে বোলপুর থানার পুলিশ।
এই মামলায় গত দেড় বছরে ১৯ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক ও ছাত্রীটির সহপাঠীরা। ওই ছাত্রী তার ওপর অত্যাচারের দিনক্ষণ ও সময় উল্লেখ করে সাক্ষ্য দেন। যার ভিত্তিতে বিচারক যৌন হেনস্থা, বেআইনি আটক, মারধর, বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি, হুমকি ও মেরে ফেলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সব্যস্ত করেন শফিকুলকে।