হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে ওঠেছে রাজধানীর চালের বাজার। প্রকারভেদে পাইকারিতে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত। সর্বনিম্ন বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। খুচরা ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলে মনে করেন পাইকারি বিক্রেতারা। এজন্য বাজার মনিটরিংদের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এছাড়া, বন্যায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা মাসের হিসাবে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৭.২৫ শতাংশ। ভালো মানের সরু চাল (নাজিরশাইল/মিনিকেট) বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা দরে। যা মাসের হিসাবে সরু চালের দাম বেড়েছে ১ থেকে ২ শতাংশ। জানা গেছে, বাঙালির প্রতি দিনের অন্যতম খাবার ভাত। কিন্তু নিত্যদিনের সেই পণ্যের দাম যেন লাগাম ছাড়া। গত কয়েক মাসে চালের দাম বেড়েছে কয়েকবার। রাজধানীর বাবুবাজারের পাইকারি চালের আড়ত থেকে চাল সরবরাহ হয় ঢাকাসহ আশেপাশে। বাজার ঘুরে দেখা গেলো, পাইকারিতে মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। ২৮ জাতের চালে বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। পারি চালে ৭ থেকে ৮ টাকা, মিনিকেটে ৫ থেকে ৭ টাকা। আর নাজির প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তবে কোনো কোনো বাজারে এর চেয়ে এক-দুই টাকা বেশি দরে চাল বিক্রি হতে দেখা গেছে। কাওরানবাজারে দেখা গেছে, কেজিতে সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। এর মধ্যে ইরি ৮ ও স্বর্ণা চালের দর কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়ে ৩৩ থেকে ৩৪ টাকায় উঠেছে, যা খুচরায় বেড়েছে ৩৮ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পাইকারি বাজারে বিআর ২৮ এর দাম ৩৬ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা, স্বর্ণা চাল ৩৩ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় পৌঁছেছে এবং মিনিকেট চালের কেজি ৪২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকায় উঠেছে। তারা বলেন, সরকার ৩২ টাকা দরে গুটি চাল কেনা শুরু করার প্রভাব চালের বাজারে পড়েছে। এখন বাজারে মোটা চালের যোগান কম। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী দোকানে মোটা চাল তুলছেন না। চলতি বছর বোরো মৌসুম ৫ই মে থেকে ৩১শে আগস্ট সরকারিভাবে ৩২ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৩ টাকায় ধান কেনার সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের। কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম কেজিতে এক টাকা বাড়লেও চালের দাম ছিল গতবারের সমান। এবার বন্যার কারণে অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলে থাকা কিছু চাতাল মাসখানেকের জন্য বন্ধ থাকায় দামের ওপর প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন তারা। তবে প্রতিদিনকার এই প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার তদারকির ওপর জোর দিলেন ব্যবসায়ীরা। আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ধানের বাজার বাড়তি, অতি বৃষ্টি, আমদানি চালের ওপর ভ্যাটসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েছে। এছাড়া দাম বাড়ার মূল কারণ হলো- মিল মালিকরা চাল স্টক করছেন। মিল মালিকরা স্টক করা বন্ধ করলে চালের দাম এমনিতেই কমে যাবে বলে তারা মন্তব্য করেন। কাওরানবাজারে আসা কাঁঠালবাগানের এক ক্রেতা বলেন, কেজিতে এক টাকা-দুই টাকা বাড়তে পারে, কিন্তু হঠাৎ করে এক লাফে ৫ টাকা ৬ টাকা বেড়ে গেলে তা অস্বাভাবিক। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ আসন্ন কার্তিকে দেশে আমনের নতুন ধান উঠবে। এ অবস্থায় মিলাররা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে দাম বাড়িয়েছেন। আগে মোকাম মালিকরা চাল সরবরাহের পর পাইকারি ব্যবসায়ীরা সুবিধামতো দামে বিক্রি করতো। কিন্তু সমপ্রতি মিল মালিকরা মূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমে বিক্রি করলে তার দায় ব্যবসায়ীদের নিতে হচ্ছে। মিল মালিকরা প্রতিদিনই চালের দাম বাড়াচ্ছেন বলেও জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তবে চালের দাম বাড়ার সুফল কৃষকরা পাচ্ছেন না। কারণ মৌসুমের শুরুতেই মিল মালিকদের কব্জায় চলে যায় অধিকাংশ ধান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.