সুস্থভাবে বেশিদিন বেঁচে থাকতে কে না চায়? আপনি কি জানেন, গত ২৫ বছর ধরে জাপানি মেয়েরা দীর্ঘায়ু হওয়ার রেকর্ড ধরে রেখেছে? গড়ে তারা ৮৬ বছরের বেশি বাঁচে। নাওমি মোরিইয়ামা তাঁর ‘জাপানিজ ওমেন ডোন্ট গেট ওল্ড অর ফ্যাট’ বইয়ে লিখেছেন কেন জাপানে মেয়েরা সহজে বুড়ো হয় না এবং কেন তারা কখনো মোটা হয় না। নিয়মমাফিক স্বাস্থ্যকর খাবারই জাপানি মেয়েদের কর্মক্ষম ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
নাওমি মোরিইয়ামার বই থেকে কেয়ার টু ওয়েবসাইটে জাপানের মেয়েদের বেশিদিন বাঁচার ১০টি রহস্য তুলে ধরা হয়েছে। আপনি চাইলে এই পরামর্শগুলো একবার দেখে নিতে পারেন।
১. জাপানের মেয়েরা প্রতিদিন প্রায় একই ধরনের খাবার খায়। তাদের খাবারের তালিকায় ভাত, মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল, সবজি, সয়া, ফল ও গ্রিন টি থাকে। এগুলোতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা তাদের শরীরকে সুস্থ রাখে এবং শরীর মেদমুক্ত রাখে।
২. নিয়মিত বাসায় রান্না করা খাবার খেতে পছন্দ করে জাপানের মেয়েরা। তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মেনু- গ্রিলড ফিশ, এক বাটি ভাত, সেদ্ধ সবজি, সুপ ও গ্রিন টি। আর ডেজার্ট হিসেবে তারা সব সময়ই ফল খেয়ে থাকে। শুনলে অবাক হবেন, জাপানের মানুষ বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ মাছ খেয়ে থাকে। নিয়মিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ মাছ খাওয়ার কারণে তারা বেশিদিন বাঁচে। আর বাঁধাকপি, ব্রকোলি, ফুলকপি, পাতা কপি, ব্রাসেলস স্প্রাউট খাওয়ার কারণে তারা শারীরিকভাবে সুস্থও থাকে।
৩. জাপানের মেয়েরা মৌসুমি ও সতেজ খাবার বেশি খায়। সেখানকার সুপারমার্কেটগুলোতে কোনো বাসি খাবার পাওয়া যায় না। প্রতিদিন প্যাকেট হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই জাপানের মেয়েরা প্রস্তুতকৃত খাবার, মাছ, মাংস ও সবজি কেনে। এ কারণে তারা পুষ্টিগুণ বজায় থাকাবস্থায় খাবার খেতে পারে।
৪. জাপানের মেয়েরা অনেক ধরনের খাবার খায় তবে অল্প পরিমাণে। তারা প্রতিটি খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে ও আস্তে আস্তে খায়। তাদের খাবার খাওয়ার ধরন হলো :
# কখনোই প্লেট ভরে খাবার নেয় না
# কখনোই কোনো একটা খাবার বেশি পরিমাণে খায় না
# প্রতিটি খাবার আলাদা আলাদা বাটিতে পরিবেশন করে
# প্রতিটি খাবার অল্প পরিমাণে পরিবেশন করে
# খাবার অবশ্যই সতেজ হতে হবে
৫. জাপানের মেয়েরা খুবই অল্প মসলা দিয়ে খাবার রান্না করে। অল্প আঁচে এসব খাবার রান্না করা হয়। যাতে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। যেসব তেল হৃৎপিণ্ডের জন্য স্বাস্থ্যকর, সেই তেল দিয়ে তারা খাবার রান্না করে।
৬. মজার বিষয় হলো আমরা মেদ কমানোর জন্য ভাতের পরিবর্তে রুটি খাই। আর জাপানের মেয়েরা রুটির পরিবর্তে ভাত খায়। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিমা বিশ্বে গমের রুটিই মোটা হওয়ার প্রধান কারণ। এ কারণে জাপানের মেয়েরা প্রতিদিন এক থেকে দুবার আধা কাপ ব্রাউন রাইস খেয়ে থাকে, যাতে তারা মোটা না হয়।
৭. জাপানের মেয়েরা সবচেয়ে বেশি খাবার খায় সকালের নাশতায়। তারা এ সময় অনেক ধরনের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করে। সেদ্ধ ভাত, টফু ও পেঁয়াজের কলি দিয়ে মিসো স্যুপ, ছোট এক টুকরা শুকনো শৈবাল, ডিমের ওমলেট অথবা এক টুকরা মাছ ও গ্রিন টি সকালের নাশতা হিসেবে খেয়ে থাকে।
৮. জাপানের মেয়েরা বাজারের তৈরি কোনো ডেজার্ট সচরাচর খায় না। চকলেট, কেক, বিস্কুট, আইসক্রিম খুবই অল্প পরিমাণে খায়। কারণ তারা এগুলোর ক্ষতিকর দিকগুলো জানে এবং মানারও চেষ্টা করে।
৯. জাপানের মেয়েরা খাবার খেতে খুব পছন্দ করে। যেখানে পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষ তাদের স্থুলতা নিয়ে চিন্তিত থাকে এবং সারাক্ষণ ডায়েটের মধ্যে থাকে সেখানে জাপানের মেয়েরা কোনো রকম ডায়েট ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। তবে অবশ্যই পরিমাণে কম।
১০. জাপানের মেয়েদের মোটা না হওয়ার এবং বেশিদিন বাঁচার আরেকটি কারণ হলো তারা নিয়মিত ব্যায়াম করে। ব্যায়মের জন্য তারা অবশ্য কোনো জিমে যায় না। নিয়মিত সাইকেল চালানো, সময় পেলেই হাঁটা এবং মাঝে মাঝে পাহাড়ে চড়ার মতো কাজগুলো তারা ইচ্ছা করেই করে থাকে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.