সিঙ্গাপুরের লিটল ইন্ডিয়া এলাকায় সেন্ট্রিয়াম স্কয়ার নামের একটি বাণিজ্যিক ভবনের ৪৯টি ইউনিট কিনেছে এস আলম গ্রুপ। ছবি : বিজনেস টাইমস।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ সিঙ্গাপুরে সোয়া দুই হাজার কোটি টাকা ‘বিনিয়োগ’ করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুরের একটি প্রভাবশালী পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের এ শিল্প গ্রুপটি সম্প্রতি লিটল ইন্ডিয়া এলাকায় সেন্ট্রিয়াম স্কয়ার নামের একটি বাণিজ্যিক ভবনে প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার বা ৭৮৬ কোটি টাকা ‘বিনিয়োগ’ করছে এস আলম গ্রুপ। এ ছাড়া দুই বছর আগে ২৪ কোটি ৮০ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার বা এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকায় একই এলাকায় একটি হোটেলও কেনে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তির পক্ষে বিদেশে পুঁজি বা মূলধন স্থানান্তরের সুযোগ নেই।
সিঙ্গাপুরের পত্রিকা বিজনেস টাইমস জানায়, এস আলম গ্রুপ যে ভবনের জায়গা কিনছে তার বর্তমান নাম সেরাঙ্গুন প্লাজা। পরে এর নাম হবে সেন্ট্রিয়াম স্কয়ার। ২০২০ সাল নাগাদ এর কাজ শেষ হবে। এখানে প্রতি বর্গফুট জায়গার দাম চার হাজার ৯৬৭ সিঙ্গাপুরি ডলার বা দুই লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এই দামে ভবনটির নিচের দুটি তলায় ২৭ হাজার ১৭৯ বর্গফুট জায়গা বা ৪৯টি ইউনিট কিনবে এস আলম গ্রুপ।
বিজনেস টাইমসের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সেন্ট্রিয়াম স্কয়ারের স্পেস কেনার দায়িত্বে রয়েছে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলমের সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান ক্যানালি লজিস্টিকস। এর আগে ২০১৪ সালে ক্যানালি লজিস্টিকসের মাধ্যমে ২৪ কোটি ৮০ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার বা এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকায় লিটল ইন্ডিয়া এলাকায় বেলিলিওস রোডে হোটেল গ্র্যান্ড চ্যান্সেলর কিনেছিলেন এস আলম। পরে হোটেলটির নাম বদল করে রাখা হয় গ্র্যান্ড ইম্পেরিয়াল হোটেল সিঙ্গাপুর। এই নামটিও শিগগিরই পাল্টে রাখা হবে ‘হিলটন গার্ডেন ইন’।
এ প্রসঙ্গে আজ বুধবার এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে এস আলম গ্রুপের গণমাধ্যম কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেইন জানান, ক্যানালি লজিস্টিকস নামে এস আলম গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। সিঙ্গাপুরে এই ধরনের বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। অফিশিয়াল বক্তব্যের জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বা তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
এস আল গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ব্যক্তিগত সহকারী আকিজউদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিভ্ন্নি গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত যে খবর আসছে তা সঠিক নয়।
সিঙ্গাপুরের ওই প্রকল্পে এস আলম গ্রুপ বিনিয়োগ করেছে কি না জানতে চাইলে আকিজউদ্দিন বলেন, ‘অল্প কিছু বিনিয়োগ করেছি। তবে এটা বাংলাদেশি টাকা না। এটা ওখানে আমাদের স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান আছে নাম ক্যানালি লজিস্টিকস। সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওখানকার স্থানীয় ব্যাংক থেকে ফাইন্যান্স নিয়ে ওখানেই ব্যবসা করছি। বিষয়টা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবার নলেজে আছে। এটা নিয়ে কেউ নিউজ করে নাই। একমাত্র প্রথম আলো সরকারবিরোধী বলে এই তারা বিষয়টা নিয়ে রিপোর্ট করেছে।’
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এস আলম গ্রুপের মালিকের এই ব্যক্তিগত সহকারী বলেন, ‘সেন্ট্রিয়াম স্কয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাবিত) করার জন্য এই নিউজ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ক্যানালি লজিস্টিকসের মাধ্যমে যে স্পেসটি আমরা নিয়েছি, সেখানে আরো অনেক স্পেস খালি পড়ে আছে। লোকাল ব্যবসায়ীরা যাতে উৎসাহী হয় সে জন্য বিজ্ঞাপনের মতো করে এই নিউজ করা হয়েছে। যেন বাংলাদেশি বা ইন্ডিয়ার ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের খবর শুনে স্থানীয়রাও ওখানে বিনিয়োগ করে। এটা তো পজিটিভ নিউজ। বাংলাদেশের মানুষের উচিত ফুলের তোড়া নিয়ে আমাদের স্বাগত জানানো।’
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে এস আলম গ্রুপ অন্যতম। এ গ্রুপের ব্যাংক, বিমা, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, শিপিং, পরিবহন, আবাসন, স্টিল ও গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসা রয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.