মুখে সরল নিষ্পাপ হাসি। চলনে-বলনে পোশাকে-আশাকে অভিজাত এক নারী। আর এই আড়ালই লুকিয়ে রেখেছিল এক ভয়ঙ্কর খুনিকে। কিন্তু পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর অকপটে বলে দিয়েছেন নিজের সব অপকর্মের কথা। জানিয়েছেন নিজের হাতে মাথা কেটে হত্যা করে সেই মৃতদেহের সঙ্গে যৌনসংসর্গের কথাও। এ ছাড়া সেই মৃতদেহের রক্তপান এবং রক্তে গোসলের কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৮ বছর বয়সী ভয়ংকর এই খুনির নাম জুয়ানা আকা (ছদ্মনাম)। মেক্সিকোর উত্তর-পূর্ব রাজ্য বাহা ক্যালিফোর্নিয়ার এই নারী ১৫ বছর বয়সে নিজের প্রেমিককে খুন করেন বলে অভিযোগ। গত বছরের নভেম্বর মাসে এই হত্যাকারী মেক্সিকোর পুলিশের কাছে ধরা পড়েছিলেন। এরপর গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমের সামনে আনা হয় এই হত্যাকারীকে।
মেক্সিকোর কুখ্যাত কারাগার ‘সেটাস কার্টেলে’ রাখা হয়েছে জুয়ানা আকাকে। মেক্সিকান ভাষায় তাঁর নামের অর্থ ক্ষুদ্রাকায়। আক্ষরিক অর্থে ছোটখাটো গড়নের (পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি) এই নারী জানান, তিনি সেলফি তুলতে ভালোবাসেন। সাংবাদিকদের সামনে অকপটে স্বীকার করেন, ‘খুব কম বয়সেই আমি মাদকাসক্ত এবং পানাসক্ত হয়ে পড়ি। ১৫ বছর বয়সে আমি প্রথম গর্ভবতী হই। আমার সন্তানের বাবা ছিল আমার চেয়ে ২০ বছরের বড়।’
সে সময়ে জুয়ানা একজন যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করলেও একপর্যায়ে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর গুপ্তচর (হালকোনিও) হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। এ সময়ই পেশাদার খুনি হিসেবেও কাজ করতেন তিনি। দি ইনডিপেনডেন্ট-এর খবর অনুযায়ী, জুয়ানার প্রথম খুন ছিল নিজের প্রথম সন্তানের বাবা। তিনি ওই ব্যক্তির মাথা কেটে একটি বাথটাবে রেখে তাঁর রক্ত দিয়ে গোসল করেন।জুয়ানা জানান, তাজা রক্ত তাঁকে খুব আকৃষ্ট করে। হত্যার পর মৃতদেহ থেকে বের হওয়া লাল রক্ত তাঁকে ‘উত্তেজিত’ করে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো জানান কীভাবে ম্যাশ (মেক্সিকোয় প্রচলিত এক ধরনের ধারালো অস্ত্র) দিয়ে একজন মানুষের মাথা কাটার পর ফিনকি দিয়ে বের হয়ে আসা রক্ত তাঁকে উত্তেজিত করত।
জুয়ানা বলেন, ‘মাথা কেটে ফেলার পর আমি মৃতদেহের গরম রক্তও পান করেছি, যা আমাকে সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত করত। মাঝে মাঝে আমি মুণ্ডুহীন দেহের সঙ্গে যৌনসংসর্গও করতাম। কেটে ফেলা মাথা এবং মৃতদেহের অঙ্গ দিয়ে নিজেকে তৃপ্ত করতাম আমি।
জুয়ানা আরো জানান, এখন তিনি মনে করছেন- যা তিনি করেছেন তা সঠিক ছিল না। তাঁর জীবনটা অন্যরকম হতে পারত। তাঁর ভাষায়, ‘হয়তো আমি এভাবে বেড়ে উঠতাম না, হয়তো আমি এতটা নৃশংস হতাম না।’
মেক্সিকোর পুলিশ সূত্রের উল্লেখ করে ডেইলি মেইল জানায়, দেশটির কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার জুয়ানা বারাজ্জার নাম অনুসারে এই নারী হত্যাকারীর ছদ্মনাম রাখা হয়েছে। সিরিয়াল কিলার জুয়ানা বারাজ্জার জন্ম ১৯৫৭ সালে। তিনি ছিলেন পেশাদার কুস্তিগীর। তবে মানুষ হত্যায় নেমে সেই পরিচয় প্রায় ভুলিয়ে দিয়েছেন। জুয়ানাকে এখন গোটা বিশ্ব ঠান্ডা মাথার সিরিয়াল কিলার হিসেবেই চেনে।
কমপক্ষে ১১ জনকে খুন করেছেন। আরো ৪৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনেও এর হাত আছে বলে সন্দেহ করা হয়। ১১ জনকে খুন করার জন্য ৭৫৯ বছরের জেল হয়েছে জুয়ানার। এখনো জেলেই আছেন জুয়ানা ‘সিনিয়র’।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.