পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে রাশিয়া। আজ মঙ্গলবার এ চুক্তি সই হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক (প্রকল্প) ড. শৌকত আকবর এ তথ্য জানান।
ঋণচুক্তি করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল এরই মধ্যে রাশিয়া গেছে। এই দলের অন্যরা হলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ হান্নান, ইআরডির সচিব মেজবাহ উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ার হোসেন।
এর আগে ১৮ জুলাই রাশিয়া সরকার বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে। দেশের ইতিহাসে এটি হবে সবচেয়ে বড় ঋণচুক্তি।
ড. শৌকত আকবর বলেন, গত ২১ জুন বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সাইট লাইসেন্স দেয়। এর পর ২৭ জুন মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ ঋণচুক্তির খসড়া অনুমোদিত হয়েছে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে। এ ব্যয়ের শতকরা ১০ ভাগ নিজস্ব তহবিল থেকে এবং অবশিষ্ট এক হাজার ১৩৮ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা দেবে রাশিয়া। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঋণের টাকা দেওয়ার ১০ বছর পর থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ২০২৭ সালের ১৫ মার্চ থেকে ঋণের প্রথম কিস্তি দেওয়া শুরু করতে হবে। প্রতিবছরের ১৫ মার্চ ও ১৫ সেপ্টেম্বর সমপরিমাণ কিস্তিতে সরকারকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। মূল অর্থের সঙ্গে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। তবে সুদের হার বছরে ৪ শতাংশের বেশি হবে না।
এর আগে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়া হয় বলে জানান শৌকত আকবর। তিনি জানান, এক লাখ এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশে প্রথমবারের মতো এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ হবে ৫০ বছর। তবে ৯০ বছর একটানা একই হারে চলতে থাকবে। বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২১ সালের মধ্যে চালুর কথা রয়েছে। এটি পরিচালনা করবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ।
শৌকত আকবর আরো জানান, এ প্রকল্প দুটি ভাগে নির্মিত হচ্ছে। প্রথমত, প্রস্তুতিমূলক এবং দ্বিতীয়ত, মূল নির্মাণকাজ। প্রস্তুতিমূলক কাজের ব্যয় ৫৫ কোটি ডলার। প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় চুক্তির কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ চুক্তির কাজ চলমান। ২০১৬ সালের মধ্যেই প্রস্তুতিমূলক সব কাজ শেষ হবে। ২০১৭ সালেই প্রকল্পের মূল নির্মাণ, অর্থাৎ পরমাণু চুল্লি তৈরির কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার ক্লাবে প্রবেশ করবে। ২০২৩ সালে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার কথা থাকলেও এ সময়ের আগেই, অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যেই প্রথম ইউনিট চালু করা সম্ভব হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.