রাজধানীর বহুল আলোচিত মগবাজার-মৌচার ফ্লাইওভার প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থায়ন করছে সৌদি আরব। সৌদি ফান্ডের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে দেশটি। এ অর্থ দিয়ে এফডিসি গেট থেকে কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে নতুন ফ্লাইওভার। এর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৪৫০ মিটার। এ অংশটি নির্মিত হলে এফডিসি রেলক্রসিং এরিয়ে সহজ যাতায়াত স্থাপিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। সৌদি এক্সপোর্ট প্রোগ্রামের মহাপরিচালক আহমেদ এম আলগানান ঢাকা সফরের সময় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন। ইআরডি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোমবার যুগান্তরকে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সৌদি আরব শুরু থেকেই অর্থায়ন করছে। পরবর্তীকালে এফডিসি থেকে সোনারগাঁও পর্যন্ত অংশটি মূল নকশায় না থাকায় তারা অর্থায়নে রাজি হচ্ছিল না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষে তাদের রাজি করা হয়েছে। তারপরও চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর ও তেজগাঁও এলাকার যানজট নিরসন করে অবাধ যান চলাচল নিশ্চিত করতে ২০১১ সালে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। সে মময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রায় ৪৪৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ২১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বর্তমানে নতুন অংশ যুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব অর্থ সহায়তা বাড়িয়েছে। এ প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ২৫০ মিলিয়ন সৌদি রিয়েল বা ৬ কোটি ৮৩ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছে সৌদি ফান্ড।
নতুন অংশ নির্মাণে সৌদি আরব অতিরিক্ত অর্থায়ন হিসেবে দিচ্ছে ৫০ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা ১ কোটি ৩৩ লাখ মার্কিন ডলার। সৌদি ফান্ডের শর্ত অনুযায়ী এ ঋণের বার্ষিক লোন চার্জ দিতে হবে ২ শতাংশ। ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে সরকারকে।
সূত্র জানায়, ঢাকায় গত কয়েক দশকে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নগরীর পরিবহন ব্যবস্থা এ অধিক জনসংখ্যার ভার বহন করতে পারছে না। ব্যাপক যানজটের কারণে অসহনীয় নগরীর মানুষের জীবন। এ অবস্থায় ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ড ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে।
এছাড়া আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট তাদের ১৯৯৯ সালের সমীক্ষায় ঢাকা মহানগরীর ২০টি পয়েন্টে ফ্লাইওভার/ইন্টারসেকশন আন্ডারপাস, বাস বে-বাস টার্মিনাল ও পার্কিং এরিয়া নির্মাণের প্রস্তাব করে। এসব প্রস্তাবের ভিত্তিতেই মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এর একটি অংশ যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হয়েছে। অন্যান্য অংশের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রকল্পে সৌদি আরবের পাশাপাশি ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
প্রকল্পটির আওতায় যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেগুলো হল- ৮ দশমিক ৭০ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৩ হাজার ৮৪৩ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটার অবকাঠামো অধিগ্রহণ এবং ৪০ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.