ফের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতান বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে। গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে ভবনের ছয়তলার একটি জুতার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর তা ওই তলায় ছড়িয়ে পড়লে দিনভর চেষ্টা চালিয়ে সন্ধ্যার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস ও বসুন্ধরার নিজস্ব কর্মীরা। আগুনে শতাধিক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দোকান মালিক সমিতি দাবি করেছে। তবে ঠিক কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা গতকাল রাত পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। সকাল সোয়া ১১টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হওয়ার পর বেশির ভাগ দোকান মালিক ও কর্মচারী তাড়াহুড়ো করে ভবনের বাইরে বেরিয়ে আসেন। দিনভর অপেক্ষায় থাকেন কমপ্লেক্সটির সামনে। খবর পেয়ে একে একে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। সেখানে আনা হয় আগুন নেভানোর অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। বসুন্ধরার নিজস্ব ফায়ারফাইটাররাও প্রাণান্ত চেষ্টা করেন দিনভর। সারা দিনের চেষ্টায় সন্ধ্যার পর ভবন থেকে ধোঁয়া বের হওয়া বন্ধ হয়। দীর্ঘ নয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলায় কমপ্লেক্সের আড়াই হাজারের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মীরা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন পার করেন। দিনভর ভবনের সামনের সড়কে ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। অগ্নিকাণ্ডে ভবনের ছাদে আটকা পড়া ১৯ জনকে উদ্ধার করা হয়। আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়া দুজন আহত হয়েছেন বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সিনেপ্লেক্সের দর্শকদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়: ঘটনার পর সিটি শপিং কমপ্লেক্সের বিনোদনকেন্দ্র স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে দর্শকদের নিরাপদে সরিয়ে দেয়ার দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। স্টার সিনেপ্লেক্সের সিনিয়র ম্যানেজার (মিডিয়া অ্যান্ড সেলস) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘটনার সময় কমপ্লেক্সের লেভেল ৮-এ অবস্থিত মাল্টিপ্লেক্সে সকালের কয়েকটি ছবির প্রদর্শনীর চলছিল। পাশাপাশি দুপুরের শোর জন্যও দর্শকেরা জড়ো হচ্ছিলেন। তবে বৃষ্টির কারণে এদিন দর্শকের চাপ তুলনামূলক কম ছিল। তিনি বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়েই তারা ছবির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেন। দর্শকদের নিরাপদে শপিংমলের বাইরে বের করে দেয়া হয়।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৯ ইউনিট: আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করেন। এছাড়া বসুন্ধরার নিজস্ব কর্মীরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন। তবে বাতাসের কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিকাল পৌনে চারটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেয়াজ বলেন, ২৯টি ইউনিটের দেড়শ’ কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছেন। মার্কেটের ভেতর প্লাস্টিকের পিভিসি পাইপ থাকায় আগুন বাড়ছে। তবে আগুন ছয়তলাতেই জ্বলছে। অন্য তলায় ছড়িয়ে পড়তে দেয়া হয়নি। কারণ, সিঁড়িতে অনেক পানি। লেভেল-৬-এর সি ব্লকে এমএস সুজ নামের একটি জুতার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দোকনটি বন্ধ ছিল। আগুন লাগার পর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের পরপর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় শপিংমল এবং আশপাশের এলাকা। কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করে সমর্থ হন। বসুন্ধরার ভেতরে জরুরি লাইট জ্বালিয়ে কাজ করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অতিরিক্ত বাতাস এবং গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির কারণে আগুনের মাত্রা বেড়ে যায়।
বসুন্ধরা সিটির মানবসম্পদ এবং প্রশাসন বিভাগের সিনিয়র জিএম মোস্তফা রাহেল জানান, ষষ্ঠতলার একটি লেদার সুজ-এর দোকানে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা ঘটে। ভবনের সি-ব্লক থেকে আমরা কর্ডন করে রাখি, যেন আগুন ছড়াতে না পারে। তিনি আরো জানান, লেদারে আগুন লাগার কারণে ধোঁয়া বের হয়। কাচ ভেঙে দেয়া হয়েছে। বসুন্ধরা সিটির হেড অব মার্কেটিং জসিমউদ্দীন বলেছেন, ছয়তলার সি ব্লকের ৭ থেকে ৮টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন ৬ তলা থেকে ছড়িয়ে পড়তে দেয়া হয়নি।
ঘটনাস্থলে মেয়র আনিসুল হক: আগুন লাগার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। ওই সময় তিনি বলেন, বারবার কেন বসুন্ধরায় আগুন লাগে তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম নিয়ে এসেছি। ফায়ার সার্ভিস চাইলে সহযোগিতা নিতে পারে। তিনি হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখার কথাও জানান। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহম্মেদ খান বলেন, ছয়তলার সিলিংয়ে আগুন লেগেছে। প্রথমে পানির সংকট ছিল। পরে ওয়াসা পানি সরবরাহ করে।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার ১৯ জন: বিকাল ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১৯ জনকে উদ্ধার করেছে। এদের সবাই বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারী। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেইন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, উদ্ধারকৃত ১৯ জনের মধ্যে ১ জন নারী ছিলেন। ধোঁয়ার কারণে ২ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন।