ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষে এক ছাত্রসহ তিনজন নিহত হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর কাশ্মীরের মধ্যাঞ্চলের বুদগাম জেলার নাগাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে ‘হিজবুল মুজাহিদিনের জঙ্গি’ বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর গত ২৮ দিন ধরে সংঘর্ষে উত্তাল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা। গতকালের তিনজনসহ সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫-তে। আহত হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ।
ভারতের গণমাধ্যমে জানানো হয়, গতকাল শুক্রবার নামাজের পর কারফিউ উপেক্ষা করে উপত্যকার ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের’ সদস্যরা একটি মিছিলের আয়োজন করে। অভিযোগ ওঠে, ওই মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। এরপরেই পুলিশ পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে নামাজের পর শ্রীনগর, উত্তর ও দক্ষিণ কাশ্মীরে স্বাধীনতার দাবিতে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায় ‘বিচ্ছিন্নতবাদীরা’।
বুদগামের নাগাম এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর ছোড়া হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পাল্টা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। এখানেই তিনজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়।
মধ্য কাশ্মীরের চন্দোরা ও ক্রালপোরা থেকে অশান্তির খবর পাওয়া গেছে। খানসাহেব এলাকায় জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। করনখোলা এলাকায় থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে স্থানীয় বাসিন্দারা। শোরপুরেও সংঘর্ষের খবর মিলেছে। চেনার উপত্যকা এবং পীর পঞ্জালেও ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভের আগুন। উত্তর কাশ্মীরের কঙ্গন এলাকাতেও ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা। হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র তীর্থস্থান অমরনাথ গুহার কাছে শ্রীনগর লে-হাইওয়ের ওপরেও সহিংস বিক্ষোভ হয়। দফায় দফায় জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে চলে বিক্ষোভ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ। গতকাল শুক্রবারের সংঘর্ষে নতুন করে ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। গোটা শ্রীনগরসহ কাশ্মীরের ছয়টি জেলায় আবার কারফিউ দেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত সেনাবাহিনী।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ, কাশ্মীরের ইতিহাসে এই প্রথম হজরতবাল দরগায় শুক্রবার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। স্থানীয় একটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন’ হজরতবাল দরগা পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেওয়ায় পুলিশ ওই দরগায় যাওয়ার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেয়। শনিবার সকাল থেকে উপত্যকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতেই টুইট করে জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘উপত্যকার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে পৌঁছালে সজাগ হবে কেন্দ্র? এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও কেন্দ্র বলছে কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এটা ভাবতে অবাক লাগছে।’ উপত্যকার পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে জানান তিনি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.