উত্তরের জেলাগুলোতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জে পানি কমতে শুরু করেছে। যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে কমলেও জলাবদ্ধতার কারণে এখনও হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। যেসব স্থানে পানি কমেছে, সেসব এলাকার মানুষ বাড়ি-ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু প্লাবিত ঘরে থকথকে কাদা। বেড়া ভেঙে পড়েছে। রান্নাঘরের চুলা ডুবে ছিল। তাই ঘরে ফিরেই সবাই একসঙ্গে সেই রান্নাঘরে চুলায় আগুন জ্বালাতে পারবেন না। সবচেয়ে বড় অভাব খাদ্যসামগ্রীর। চাল, ডাল, নুন, তেলের জোগান দেয়া এই সময় প্রায় অসাধ্য। আশপাশের জমিজমা, সবজি বাগান ডুবে ছিল বন্যায়। সেসব প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বলা যায়, এই বন্যায় সবার আর্থিক অবস্থা আরও ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। কাজকর্ম ছিল না। তাই আর্থিক সমস্যাও চরমে। শুকনো খাদ্যেরও অভাব। তাদের প্রায় তিন বেলাই খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। দুঃখী দরিদ্র মানুষ প্রায় অনাহারে দিনযাপন করছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশুদ্ধ পানির অভাবে ঘরে ঘরে ডায়রিয়া। বলা যায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যার্ত মানুষ ও গবাদিপশু।
প্রতিদিনই হাসপাতালে যাচ্ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত অসংখ্য রোগী। গাইবান্ধায় পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে নানা রোগ-ব্যাধি। বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও পয়ঃনিষ্কাশন সংকটে পড়েছে বন্যার্তরা। তারা অনেকে চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, শ্বাসনালির প্রদাহসহ আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত রোগে। এ রকম দুঃসহ একটি সময়ে তাদের জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। সরকার যে ত্রাণ বিতরণ করেছে তা অপ্রতুল। বেশির ভাগ বন্যাক্রান্ত মানুষই ত্রাণবঞ্চিত। তাদের এ মুহূর্তে জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। যোগাযোগ ব্যবস্থাও প্রায় সব অঞ্চলে ভেঙে পড়েছে। তাই ত্রাণ পাঠানোও বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করেছে। হেলিকপ্টার হতে পারে ত্রাণ বিতরণের একটি বড় মাধ্যম। যেসব স্থানে উঁচু ঘর বা মাঠ আছে সেখানে ত্রাণবাহী হেলিকপ্টার চলাচল করতে পারে। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যানরা ত্রাণ বিতরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। স্বাস্থ্য খাত থেকে জনগণ পেতে পারেন বড় ধরনের সহযোগিতা। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক হওয়ার জন্য যেসব ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছেন তাদের দিয়ে মেডিকেল টিম গঠন করা যেতে পারে। ডাক্তারদের নেতৃত্বে তাদের গ্রামাঞ্চলে পাঠানো দরকার।
শুধু সরকারিভাবেই নয়, বেসরকারি উদ্যোগে মেডিকেল টিম গঠন করা যেতে পারে। তারা বন্যাক্রান্ত এলাকাগুলোয় ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিসের মতো রোগের চিকিৎসায় ওষুধ-পথ্য নিয়ে যেতে পারেন।
বড় বড় ওষুধ নির্মাতা কোম্পানিগুলো এ ক্ষেত্রে রাখতে পারে অবদান। তারা খাবার স্যালাইন, ওষুধ নিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে পারে। এ সময় রাজনীতিকরা উদ্যোগী হয়ে মাঠে নামলে প্রভূত উপকার হবে জনগণের। দুর্গত মানুষের সেবার এটি একটি মোক্ষম সময়ও তো বটে। সরকারি-বেসরকারি সবার মিলিত উদ্যোগই হতে পারে বিপন্ন মানবতার শুশ্রূষা করার বড় শক্তি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.