মালয়েশিয়ায় বন্দিশিবিরে অসহায়ত্বের গ্লানি টেনে অবশেষে দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে দেশে ফিরছেন ৪ হাজার ৯০০ বাংলাদেশী।
ভাগ্য ফেরানোর আশায় দালালদের প্রলোভনে পরিবারে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে অনেক যুবক লুফে নেন স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ। তবে যাত্রা শুরুর আগে ঘুনাক্ষরেও তারা উপলব্ধি করতে পারেন না, কী আছে সামনে।
সোনার হরিণ হাতে পেতে মালয়েশিয়ায় যাত্রা শুরুর পরপরই খুলতে থাকে তাদের চোখ। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুর্গম সাগরপথে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, অবর্ণনীয় অত্যাচারে হঠাৎ চোখ খুলে যাওয়া এই যুবকদের সামনে তখন না আছে সামনে যাওয়ার পথ, না আছে পেছনে ফেরার পথ।
থাইল্যান্ডের জঙ্গল আর মালয়েশিয়ায় বন্দিজীবন কাটিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত মালয়েশিয়া থেকে ৪ হাজার ৯০০ জন ফিরেছেন বাংলাদেশে।
ফেরার সময় এসব বাংলাদেশীর ঝুলিতে ছিল কেবল মালয়েশিয়া-জীবনের দুঃসহ স্মৃতি। অথচ দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে এবং পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে ভিটেমাটি-সহায় সম্বল বিক্রি করে তারা মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন।
এদিকে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য বিভাগের প্রতিদিনের চিরুনি অভিযানে এখন পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশীকে আটক করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
তবে ইমিগ্রেশন বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিমুনিয়া, লেঙ্গিং, লাঙ্গ, জুরুত, তানাহ মেরায়, মাচাপ উম্বু, পেকা নানাস, আজিল, কেএলআইএ সেপাং ডিপো, ব্লান্তিক, বুকিত জলিল ও পুত্রজায়ায় সাম্প্রতিক অভিযানে আটককৃত বাংলাদেশীদের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের উপ-সহকারী পরিচালক জোসামি মাস্তান বলেন, বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে যারা আটক আছেন, তাদের বেশির ভাগই অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ কিংবা অবৈধভাবে থাকার কারণে গ্রেফতার হয়েছেন।
গ্রেফতাকৃতদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ধারা ৬(১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬-এর ১২(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে অহরহ প্রাণহানি ঘটছে, কেউ ধরা পড়ছেন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কিংবা প্রতারকদের হাতে জিম্মি হচ্ছেন অনেকেই। সহায়-সম্বল বেঁচে টাকা দেয়ার পর মুক্তি মিলছে কারো।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম শাখার প্রথম সচিব শাহিদা সুলতানা যুগান্তরকে জানান, বন্দিশিবিরে যারা আটক রয়েছেন, তাদেরকে দ্রুত দেশে পাঠানোর সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, দূতাবাসের শ্রম শাখার সচিবরা প্রত্যেকটি বন্দিশিবির পরিদর্শন করে বাংলাদেশীদের নাগরিকত্ব যাচাই এবং সনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে তাদের দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
শাহিদা সুলতানা জানান, জানুয়ারি থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৪ হাজার ৯০০ জনকে বিভিন্ন বন্দিশিবির থেকে ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে দেশে পাঠানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে বন্দিদের নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ শুনে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্যাম্পে কতজন বাংলাদেশী আটক রয়েছে তাদের তালিকা দ্রুত মিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায় একটি ক্যাম্প থেকে তালিকা দিতে এক থেকে দুই সপ্তাহ বিলম্ব হওয়ায় দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে সমস্যা হয়। আবার ক্যাম্প থেকে তালিকা পাঠানো হলেও ব্যক্তির ফরম থাকে না। পরে ক্যাম্পে যোগাযোগ করে তা নিয়ে আসতে হয়। তারপরও দ্রুত বন্দিদের দেশে পাঠাতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.