শহড়ের একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে হারিয়ে যেতে চাইলে ঘুরে আসুন সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বিছানাকান্দি থেকে। প্রকৃতির এক অনন্যসুন্দর জায়গা বিছানাকান্দি। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ সেখানে যাচ্ছে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। চলুন জেনে নেওয়া যাক সিলেটের বিছানাকান্দি সম্পর্কে।
ঢাকা থেকে সিলেট রুটের যেকোন বাস/ট্রেন ধরে চলে আসতে পারেন সিলেটে। সিলেট শহড় থেকে গোয়াইনঘাট রোড ধরে প্রায় ৬৫ কি.মি. দূরে বিছানাকান্দির অবস্থান। শহর থেকে সিএনজি/মাইক্রো ভাড়া করে প্রথমে আসতে হবে প্রায় ৬২ কি.মি. দুরের গোয়াইনঘাট উপজেলার হাঁদারপাড় নামক স্থানে। যাওয়ার পথে চা বাগানসহ সুন্দর প্রাকিতিক দৃশ্য চলার পথকে উপভোগ্য করে তুলবে। বাইরে চোখ রাখলেই অফুরন্ত সবুজ মাঠ ঘাট দেখতে পারবেন আর একটু লক্ষ্য করলেই মাঠগুলোর পিছনে নীল পাহাড় চোখে পড়বে। নীল আকাশ আর তার চাইতেও নীল পাহাড় এবং সবুজের যে অপূর্ব সমন্বয় তা শহরের মানুষগুলোর জন্য যেন উপহারের মত।
হাঁদারপাড় থেকে গরম থাকলে চাইলে হেঁটে বিছানাকান্দি পর্যন্ত চলে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে সময় লাগবে ৪০-৪৫ মিনিট। তবে বর্ষাকালে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ছাড়া যাওয়া যাবে না। হাঁদারপাড় থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা সোজা আপনাকে নিয়ে যাবে বিছানাকান্দিতে। সেক্ষেত্রে আপনার খরচ পরতে পারে ৮০০-১০০০ টাকা। বিছানাকান্দি থেকে সময় পেলে পান্তুমাই ঘুরে আসতে পারেন। বিছানাকান্দির কাছেই অবস্থিত এই স্পটটিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে দেখতে পাবেন ভারত থেকে আসা অসাধারন সুন্দর ঝর্ণা বপহিল, ভারতে অবস্থান হওয়ার কারনে খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে মনে অবশ্যই আফসোস থাকবে যে এত সুন্দর একটি ঝর্ণার অবস্থান বাংলাদেশে না হয়ে ভারতে হওয়ার জন্য।
নৌকা করে বিছানাকান্দি আসার পুরো পথটা অসম্ভব রোমাঞ্চকর। স্বচ্ছ আর ঠাণ্ডা পানি ঠেলে নৌকার এঁকেবেঁকে বয়ে চলা মনে এনে দেয় অদ্ভুত প্রশান্তি। তার উপর বাড়তি পাওনা হিসেবে তো আছে আশেপাশের গগনচুম্বী পাহাড় আর মাথার উপর শুভ্র শান্ত আকাশের আবরণ। পথ যত কমতে থাকে অস্পষ্ট পাহাড়গুলো স্পষ্ট নিরেট আকার নিতে থাকে আর তখন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে হয়। যেন কোন শিল্পীর আঁকা ছবির মত এ দৃশ্য, প্রতিটি খাঁজে রয়েছে অপার সৌন্দর্য আর নিখুঁত কারুকার্যের নিদর্শন। পথে চলত চলতে দুপারে দেখা মিলতে পারে কিছু আদিবাসীদের। এমনি করে চলতে চলতে কখন যে পথ শেষ হয়ে আসে তা বলা মুশকিল। কিন্তু পথ শেষ হলে হবে কি সৌন্দর্যের শেষ হবার উপায় নেই। কারন তখন আপনি চলে এসেছেন অনন্যসুন্দর বিছানাকান্দিতে।
বিছানাকান্দির স্বচ্ছ আর হিমশীতল পানির নিচে যেন শত শত পাথরের মেলা বসেছে। নানা রঙের, নানা আকারের আর বিচিত্র সব উপাদানের পাথরে ভরপুর এই জায়গাটিকে পাথরের রাজ্য বললে ভুল হবে না। পানিতে শরীর এলিয়ে দিয়ে যখন চোখ বুজে আসে তখন একে পাথরে ভরা বাথটাব বলেই মনে হয়। বর্ষার সময়টাতে পানিতে টইটুম্বুর থাকে বিছানাকান্দি। অপরূপ চোখ জুড়ানো এক মোহনীয়তায় যেন আবিষ্ট করে রাখে এখানে আসা মানুষগুলোকে। তবে শীতকালে বিছানাকান্দির জৌলুস অনেকটাই কমে যায়। তাই শীতকালে ভ্রমন আকর্ষনীয় নাও হতে পারে।
বিছানাকান্দি ভারত এবং বাংলাদেশের বর্ডার এলাকায় অবস্থিত। প্রায় ১০০ গজ দূরে থাকা লাল পতাকাগুলোর ওপাশেই ভারত। এখান থেকে সহজেই ভারতীয় জলপ্রপাত গুলো দেখা যায় যা থেকে পানি বয়ে আসে বিছানাকান্দি পর্যন্ত। পাথর, পানি, পাহাড় আর আকাশ নিয়েই যেন বিছানাকান্দি। এখানে আসার পর যে কথাটি সর্বপ্রথম মনে হয় তা হল প্রশান্তি। এই প্রশান্তিটুকু নিমিষেই ভুলিয়ে দেয় পথের ক্লান্তি ও গ্লানি। প্রকৃতির সৌন্দর্যের কাছে যেন হার মানতেই হয় নাগরিক সভ্যতাকে।
সতর্কতা
পাথরে চলার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে নয়তো পা পিছিলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। খাবারের পর্বটুকু হাঁদারপাড় থেকে সেরে আসা ভালো। বিছানাকান্দিতে খাবারের দোকান পাওয়া দুর্লভ। ছোটখাটো কিছু দোকান ছাড়া তেমন কিছু নেই। তবে চাইলে সিলেট শহর থেকেই খাবার প্যাক করে নিয়ে আসতে পারেন।পানিতে কোন ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। এর সৌন্দর্য রক্ষা করা আমাদের সকলে দায়িত্ব। বিছনাকান্দি যেহেতু জিরো পয়েন্টে অবস্থিত তাই ভ্রমনকারীদের বর্ডারের আশেপাশে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, কোনভাবেই যাতে বর্ডার ক্রস না হয়। অনেক সময় বর্ষাকালে এখানে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। তাই যাবার পূর্বে আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য জেনে নেওয়া উচিত।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.