অস্ট্রেলিয়াকে মাটিতে নামালো শ্রীলঙ্কা। শুধু সিরিজ নয়, ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করলো তারা। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল হিসেবে শ্রীলঙ্কা সফর করে অস্ট্রেলিয়া। আর শ্রীলঙ্কা দল তখন ছিল ৭ নম্বরে। র্যাঙ্কিংয়ের দুই মেরুর দুই দলের সিরিজের আগে স্পষ্ট ফেভারিট ছিল অস্ট্রেলিয়া। তাদের ৩৩ বছর টেস্ট ইতিহাসে শ্রীলঙ্কার কাছে মাত্র এক ম্যাচ হারে অস্ট্রেলিয়া। আর সিরিজ হার তো দূরের কথা! কিন্তু সেই অস্ট্রেলিয়াকে এবার শুধু ম্যাচ নয়, বরং হোয়াইওয়াশ করে ছাড়লো শ্রীলঙ্কা। এতে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়েও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। শীর্ষ থেকে তিন নম্বরে নেমে গেছে অস্ট্রেলিয়া। শীর্ষ দুইয়ে উঠে গেছে ভারত ও পাকিস্তান। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো সিরিজ হারিয়ে ৭ নম্বর থেকে এক ধাপ উন্নতি হয়েছে শ্রীলঙ্কার। এই নিয়ে এশিয়ার মাটিতে টানা তিন টেস্ট সিরিজ হারলো অস্ট্রেলিয়া। ২০১৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচরে টেস্ট সিরিজ হারে। এরপর গত বছর ভারতের মাটি থেকে ৪ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হোয়াইটওয়াশ হয়। আর এবার শ্রীলঙ্কার মাটি থেকে একই রকম লজ্জা নিয়ে ফিরলো। এশিয়ার মাটিতে তারা এমন টানা লজ্জা তারা কখনো পায়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অজিরা সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারে ১০৬ রানে। আর গলের দ্বিতীয় ম্যাচ হারে ২২৯ রান। আর কলম্বোর শেষ টেস্ট হারলো ১৬৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। শ্রীলঙ্কার এই সিরিজ জয়ের নায়ক স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ। শেষ টেস্টের দুই ইনিংসে তিনি নিয়েছেন ১৪৫ রানে ১৩ উইকেট। ষষ্ঠবারের মতো কোনো টেস্টে ১০ উইকেটের বেশি নিলেন তিনি। ভিন্ন ভিন্ন দলের বিপক্ষে তিনি ১০ উইকেটের বেশি নিলেন। ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র মুত্তিয়া মুরলিধরনের ভিন্ন ৬ দলের বিপক্ষে ১০ উইকটে নেয়ার ঘটনা আছে। তিন ম্যাচের এই সিরিজে ১২.৭৫ গড়ে সর্বোচ্চ ২৮ উইকেট নিয়েছেন হেরাথ। কোনো টেস্ট সিরিজে এটি তার সর্বাধিক উইকেট নেয়ার ঘটনা। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তিনি নেন সর্বাধিক ২৩ উইকেট। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা। তিনি ১৩৪ টেস্ট খেললেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো টেস্ট জেতার স্বাদ না পেয়েই বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও লাকশান সানদাকান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন টেস্টে খেলে তিনটিতেই জয় পেলেন। সিরিজ জয়ের নায়ক রঙ্গনা হেরাথ এমন একটি জয়ের অপেক্ষায় ১৭ বছর ধরে। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা একমাত্র টেস্ট ম্যাচ জিতেছিল ১৯৯৯ সালে। ওই সিরিজে দলে ছিলেন ২১ বছর বয়সী হেরাথ। ক্যান্ডির প্রথম ম্যাচে অভিষেক হওয়ার কথা ছিল হেরাথের। কিন্তু তাকে রুমে বসেই দলের একমাত্র জয় দেখতে হয়। গলের পরের ম্যাচে তার অভিষেক হয়। প্রথম ম্যাচেই ৪ উইকটে নিয়ে আলো ছড়ান। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র হয়। সেই থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি জয়ের অপেক্ষায় ছিলেন হেরাথ। অবশ্য অভিষেকের পর হেরাথ দলে নিয়মিত ছিলেন না। ১৯৯৯ সালে দু’টি ও ২০০০ সালে মাত্র একটি টেস্ট খেলেন তিনি। এরপর টানা তিন বছর দলে জায়গা পাননি। মূলত, মুত্তিয়া মুরলিধরনের মতো স্পিনার দলে থাকা হেরাথের কপাল মন্দের কারণ ছিল। তিন বছর পর ২০০৪ সালে ফের দলে ডাক পান। তারপরও খুব একটা নিয়মিত ছিলেন না। মুরলি ২০১০ সালে টেস্ট থেকে অবসর নেয়ার পর শ্রীলঙ্কা দলে নিয়মিত খেলতে থাকেন হেরাথ। এখন তিনিই লঙ্কানদের প্রধান স্পিনার হয়ে উঠেছেন। কলম্বোর শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৫৫ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে অস্ট্রেলিয়া করে ৩৭৯ রান। ২৪ রানে পিছিয়ে থেকে স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসে করে ৮ উইকেটে ৩৪৭ রান। এতে জয়ের জন্য শেষ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ৩২৪ রানের টার্গেট দাঁড়ায়। এই টার্গেট তাড়া করতে নেমে টেস্টের শেষ দিন তারা মাত্র ৪৪.১ ওভারে ১৬০ রানে গুটিয়ে যায়। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার করেন সর্বোচ্চ ৬৮ রান। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার আর কারো ব্যাট তেমন কথা বলেনি। তাদের ৭ ব্যাটসম্যানের রান দুই অংকের কোঠা স্পর্শ করেনি। সংক্ষিপ্ত স্কোর শ্রীলঙ্কা: ৩৫৫ ও ৩৪৭/৮ অস্ট্রেলিয়া: ৩৭৯ ও ১৬০ (মার্শ ২৩, ওয়ার্নার ৬৮, স্টার্ক ২৩, লায়ন ১২, হেরাথ ৭/৬৪, লিদরুয়ান ২/৭১) ফল: শ্রীলঙ্কা ১৬৩ রানে জয়ী ম্যাচসেরা: রঙ্গনা হেরাথ সিরিজ সেরা: রঙ্গনা হেরাথ সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ শ্রীলঙ্কা ৩-০তে জয়ী
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.