দেশের ১১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সরকারি এ সংস্থাটি বিদেশী কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও একইভাবে সাবধান থাকতে ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যে জারি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিচ্ছি। এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় বা ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়ে যাতে প্রতারিত না হয় সেজন্য এ পদক্ষেপ। এরপরও কেউ যদি চিহ্নিত বিশ্ববিদ্যালয় বা তার ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়, তাহলে তার দায়দায়িত্ব সরকারের নয়।’ তিনি বলেন, বিদেশী কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনও এখন পর্যন্ত সরকার দেয়নি। তাই শিক্ষার্থীরা যেন এ ধরনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়, সে পরামর্শও আমাদের থাকবে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬টি ক্যাটাগরি আছে। এরমধ্যে একটি ক্যাটাগরি হচ্ছে আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনাকারী। ইতিমধ্যে আদালত এ ধরনের ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছে। এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আছে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি। এটি শুধু আউটার ক্যাম্পাস নয়, অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনার দায়েও অভিযুক্ত। আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব চিটাগং যদিও আউটার ক্যাম্পাস চালাচ্ছে না বলে ইউজিসিকে জানিয়েছে। কিন্তু তাদের বেশ কয়েকটি অননুমোদিত ক্যাম্পাস আছে বলে ইউজিসি জানায়। সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং, কুইন্স ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের আউটার ক্যাম্পাস আছে। আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি কয়েকটি ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত। এটি সরকার কর্তৃক বন্ধ ঘোষিত। আদালতের রায় নিয়ে চলছে। কিন্তু তারা সারা দেশে ১৬টি অবৈধ আউটার ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। ইবাইস ইউনিভার্সিটিও কয়েকটি ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে আছে, মালিকানা (বিওটি) দ্বন্দ্ব, অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটির মালিকানা (বিওটি) দ্বন্দ্ব আছে। এসব বিষয় জেনে বুঝে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সব বিশ্ববিদ্যালয় আদালতের রায় মেনে আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করেছে। তারপরও যাতে কেউ এ ধরনের ক্যাম্পাসে ভর্তি না হয়, সেজন্য ওই তালিকা আমরা প্রকাশ করেছি। গণবিজ্ঞপ্তি থেকে এসব ক্যাম্পাসের ঠিকানা পাওয়া যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে নর্দান ও আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব চিটাগং জানিয়েছে যে, তারা আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করেছে। কিন্তু আর কারও কাছ থেকে এ ধরনের ক্যাম্পাস বন্ধের তথ্য পাইনি। তাই প্রত্যেকের অবস্থা ও ক্যাম্পাসের তালিকা গণবিজ্ঞপ্তিতে যাচ্ছে।’
এদিকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতেও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে বলে জানা গেছে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়গুলো আসেনি। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির দ্বন্দ্বের বিষয়টি ইউজিসির একাধিক প্রতিবেদনেও স্থান পেয়েছে। আর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির একজন ট্রাস্টি সদস্য সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিতে অভিযোগ করেছেন, তাকে বিওটি থেকে বের করে দেয়া হয়। এ নিয়ে ওই সদস্য সম্প্রতি বিওটির বাকি সদস্যদের লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হেলালউদ্দিন বলেন, ‘আমরা একজন বিওটি সদস্যের অভিযোগপত্র পেয়েছি। তবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আছেন, তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা বিশ্বাস করা কঠিন। সরকার চাইলে আমরা তদন্ত করে দেখব।’
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকসহ বেশ কয়েকটি বড় ইউনিভার্সিটির অননুমোদিত ক্যাম্পাসও আছে। কিন্তু এগুলো সম্পর্কে ইউজিসি অনেকটাই নিশ্চুপ। ইউজিসির একজন কর্মকর্তার এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘যদিও তাদের ক্যাম্পাস অনুমোদিত নয়। কিন্তু ক্যাম্পাস লাগোয়া আলাদা বাড়িতে হওয়ায় আমরা সে সম্পর্কে কিছু বলছি না। ছাত্রছাত্রীর জায়গা না হওয়ায় তারা পাশাপাশি ভবন ভাড়া নিয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে।
জানা গেছে, বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যমান অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তির আগে প্রোগ্রাম ও কোর্স ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত কিনা তাও জেনে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ সংক্রান্ত তথ্য ইউজিসির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এক ক্যাম্পাসে কোর্স ও বিভাগ অনুমোদন নিয়ে আরেক ক্যাম্পাসে চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সোবহানবাগের ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি একটি। এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের মূল ক্যাম্পাসে কোর্সের অনুমোদন নিয়ে সোবহানবাগে চালাচ্ছে। অন্য যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এমন কাজ করছে, সেগুলো চিহ্নিত করতে ইউজিসি আকস্মিক অভিযান চালাবে বলে জানা গেছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.