বহুল আলোচিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের চারটি ধারা বিলুপ্ত করে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৬’ প্রণয়নের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আইন বাস্তবসম্মত হলেই কাজে লাগে। তথ্যপ্রযুক্তি আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কিছু ধারায় দুর্বলতা ধরা পড়ে। সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন ওঠে ৫৭ ধারা নিয়ে। জামিন অযোগ্য ছিল বলে এই ধারার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এমনকি ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে অসাবধানতার কারণেও হয়রানির শিকার হয় অনেকে। তাই ৫৭ ধারার বিলুপ্তি ঘটিয়ে নতুন আঙ্গিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন মানুষের ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির পথ সুগম করবে।
বর্তমান আইনে অপরাধের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা ছিল না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় অপরাধের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি কিছু অপরাধের শাস্তি শিথিল করা হয়েছে। শাস্তি প্রদানের বিষয়টিকেও আরো যুক্তিযুক্ত করা হয়েছে। আমরা মনে করি, ন্যায়বিচারের স্বার্থেই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ফলে আইনটির ব্যবহার নিশ্চয়ই সহজ হবে।
প্রযুক্তির আশীর্বাদের সঙ্গে কিছু অভিশাপও থাকে। অপরাধীরা প্রযুক্তির অসৎ ব্যবহার করছে। তথ্যপ্রযুুক্তির বিকাশের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি। শুধু ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্রীয় অনেক প্রতিষ্ঠানও সাইবার হামলার শিকার হচ্ছে। অনলাইন ব্যাংকিং চালু হওয়ায় ব্যাপক হারে ব্যাংক জালিয়াতি হচ্ছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উসকে দেওয়ার কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। সাইবার অপরাধ তরুণ সমাজকেও ধ্বংস করছে। পর্নোগ্রাফি ও মাদক অনেকের চারিত্রিক অধঃপতন ঘটাচ্ছে। এ পরিস্থিতির রাশ টেনে ধরতে না পারলে তারুণ্যের অপচয় একদিন জাতির জন্য বিপদ ডেকে আনবে। প্রযুক্তির এই অপব্যবহার বাড়তেই থাকবে—বিশেষজ্ঞরা এমন হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করেছেন। তাই অপরাধ দমনে কার্যকর কৌশল বের করতেই হবে।
কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেই একটি আইন কার্যকর বলে প্রমাণিত হয় না। ব্যবহারটাই এখানে মুখ্য। এ জন্য আইনের প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়ন করতে হয়। অনেকে না জেনে, স্রেফ কৌতূহল থেকেই সাইবার অপরাধে জড়াচ্ছে। তাই কোন কোন আচরণ অপরাধ বলে গণ্য, সেগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বর্তমানে সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশ তেমন দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, পুলিশের প্রযুক্তি-জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাও পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। তাই অবকাঠামো শক্তিশালী করার পাশাপাশি মামলার তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সবারই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নত দেশগুলো হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে সাফল্য দেখাচ্ছে। তাদের থেকেও আমাদের অনেক শিক্ষণীয় রয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া আজ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, আইন প্রণয়ন বা পরিমার্জনই শুধু নয়, আইনের প্রয়োগেও আন্তরিক হতে হবে। দেশে অনেক আইন আছে, যার সঠিক ব্যবহার নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এ জাতীয় শৈথিল্য আমরা আশা করি না। প্রযুক্তি এখন আমাদের ব্যক্তিজীবন ও রাষ্ট্রের অনিবার্য অংশ। প্রযুক্তি উন্নয়নেরও সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তাই একে নিরাপদ রাখতেই হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.