ল্যান্ডফোনে ভিডিও কল ও ভিডিও কনফারেন্স চালু হতে যাচ্ছে। ফোনে কথা বলা বাদ দিয়ে ইন্টারনেট চালু রাখার দিনও শেষ। এখন থেকে টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে গ্রাহকরা একই সঙ্গে কথা বলা ও উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এ জন্য আসছে নেক্সট জেনারেশন নেটওয়ার্ক (এনজিএন) প্রযুক্তি। ‘মর্ডানাইজেশন অফ টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেকটিভিটি (এমওটিএন)’-এ প্রকল্পের মাধ্যমেই এভাবে টেলিযোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ প্রকল্পে চীন সরকার এক হাজার আট শ’ ৫২ কোটি ৪৪ হাজার টাকা ঋণ সহায়তা দেবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার দেবে প্রায় দুই শ’ কোটি টাকা। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। গত ২৪শে আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়নে একক ঠিকাদার হিসেবে কনসোর্টিয়াম অফ মেসার্স জেডটিই হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড এবং মেসার্স জেডটিই করপোরেশনকে মনোনীত করা হয়েছে। চীন সরকার মনোনীত এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন সেবা চালুর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ মনে করছে, ফিক্সড ফোনের গতানুগতিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে বিটিসিএল’র পক্ষে কারিগরি ও আর্থিক উভয় ক্ষেত্রেই টিকে থাকা কঠিন। এছাড়া কপার বেইজড ফিক্সড ফোনের বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত আসতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের প্রযুক্তির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক বেশি। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই পরিচালনা ব্যয়ের সমান আয় করা সম্ভব হয় না। এসব নানা বিষয় চিন্তা করে দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টিএন্ডটি বোর্ডের আওতাধীন শক্তিশালী ট্রান্সমিশন ও ডাটা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং সেবার মান পর্যবেক্ষণ ও ত্রুটিমুক্ত করার জন্য অত্যাধুনিক পদ্ধতি স্থাপন করা হচ্ছে। এর আগে বিটিসিএলের প্রকৌশলীরা দেখেছেন, মোবাইল টেলিফোনের মাধ্যমে উচ্চগতিসম্পন্ন ডাটা সার্ভিস অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অন্যদিকে ফিক্সড ফোন অপারেটর হিসেবে বিটিসিএল অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্বল্প খরচে এ উচ্চগতির ডাটা সার্ভিস দিতে সক্ষম। তাই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা দেয়ার জন্য ‘ইন্সটলেশন অফ এনজিএন বেইজড টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করা হয়। ওই প্রকল্পের কাজও অনেক দূর এগোয়। কিন্তু ওই প্রকল্পের ঋণচুক্তি না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। ২০১৫ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ‘ইন্সটলেশন অফ এনজিএন বেইজড টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ’- প্রকল্পের বদলে ‘মর্ডানাইজেশন অফ টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেকটিভিটি (এমওটিএন)’ প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। নতুন প্রকল্পের বিপরীতে চীন সরকারের ঋণ সহায়তার অনুমোদন পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তির প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে বাণিজ্যিক চুক্তির খসড়া অনুমোদন মেলায় সহসাই চীনের কোম্পানি জেডটিই কাজ শুরু করবে। এর আগে ২০০৮ সলের ১লা জুলাই বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ডকে পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই বিটিসিএল কোম্পানি গঠনের মূল লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়নি। এ কারণে বিটিসিএলের আয় দিন দিন কমতে থাকে। তাই বিটিসিএলের আয় বাড়ানোর জন্যই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.