বাজারে অনেক পণ্যের দামে দৃশ্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। চাল, তেল, পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। চাল ও সবজির দাম বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে ব্যবসায়ীরা বন্যার কথা বলছেন। কিন্তু কিছু পণ্য আছে সরবরাহে ঘাটতি না থাকার পরও দাম বেড়ে গেছে। অর্থাৎ আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছে সিন্ডিকেট। আর এর মাসুল গুনছে সাধারণ মানুষ।
গত রমজান মাসে কোনো কারণ ছাড়াই চিনির দাম বাড়তে শুরু করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় সংকট কৃত্রিম। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যে নিয়ন্ত্রণহীনতা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বরাবরই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সরকারি দুর্বল নজরদারি ও টিসিবির নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিচ্ছে। এমনও দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার পরও স্থানীয়ভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। কোনো কোনো জেলায় বন্যা হওয়ায় সরবরাহে সাময়িক ঘাটতি দেখা দিতেই পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে ঢালাওভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়া ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
বেসরকারি সংস্থা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে ২০১৫ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় ৬.৩৮ শতাংশ বেড়ে যায়। বৃদ্ধির এই হার ২০১২ সালে ছিল ৬.৪২, ২০১৩ সালে ১১ ও ২০১৪ সালে ৬.৮২ শতাংশ। এই প্রবণতা থেকে স্পষ্ট, বাজারে অসাধু শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাজারব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণেই যে প্রতিবছর বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়, তা বলাই বাহুল্য।
ব্যবসায়ীদের হাতে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার পেছনে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দুর্বলতাকেও অনেকে দায়ী করেন। আমরাও মনে করি, টিসিবি ক্রমেই গুরুত্ব হারাচ্ছে। হাতে গোনা কিছু পণ্য মাঝেমধ্যে তারা খোলাবাজারে বিক্রি করে, যা বিদ্যমান বিশাল বাজারব্যবস্থায় কোনো প্রভাবই ফেলতে পারে না। টিসিবির দুর্বলতার জন্য নিজস্ব তহবিলের অভাবের সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেও দায়ী করা হয়। সরকার কেন টিসিবিকে সবল করার পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি বাড়ছে বাসা ভাড়া, পরিবহন ভাড়া, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে ব্যয়। সরকারি-বেসরকারি সেবার দামও বাড়ছে। সেই অনুপাতে বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে জীবনযাত্রার মানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ১৬ কোটি মানুষের দেশে ৯ কোটি ১০ লাখই অতিদরিদ্র, দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির। বাজার অস্থিতিশীল হওয়া মানেই দেশের বেশির ভাগ মানুষের ওপর চাপ পড়া। তাই সরকারকে বাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাই শুধু নয়, কর্মসংস্থানও বাড়াতে হবে। তখন উত্পাদন বাড়বে, বাড়বে ক্রয়ক্ষমতা। আয় বাড়লে মূল্যস্ফীতির আঘাতও হয় সহনীয়।
সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে। বেঁচে থাকার তাগিদ থেকেও কেউ কেউ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। আমরা আশা করব, দৃশ্য ও অদৃশ্যমান সব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিশ্চিত করা হবে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের দুই বেলা আহারের নিরাপত্তা। যেসব দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বাজারকে বারবার কবজা করে নিচ্ছে সেগুলোরও নিরসন করতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.