সমর মজুমদারের শিল্পকর্মকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যরীতির মিশ্রণ বলা হয়| তাঁর শিল্পকর্মে ঐতিহ্যের অনুসন্ধানের সঙ্গে আধুনিকতার সংযোগ স্পষ্ট| তিনি শুধু মোগল, রাজপুত, জাপান, পারস্য ও চৈনিক শিল্পরীতির পথে চলেননি৷ সম্প্রতি ঢাকা আর্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো সমর মজুমদারের একক প্রদর্শনী৷ শিরোনাম ‘সয়েল অ্যান্ড স্পিরিট’৷ সমর জানেন, ছবির সঙ্গে দর্শকের যোগাযোগের সহজ পথ হলো বিষয় নির্মাণে সরল পথ খুঁজে নেওয়া৷ তাই হয়তো তাঁর চৌকোনো ক্যানভাসের মাঝামাঝিতে ছবির বিষয় অবস্থান করেছে৷ ছবিতে আলো-ছায়ার উপস্থিতি, মাটির রঙের কাছাকাছি রং, এর সঙ্গে সবুজাভ আঙিনা, নির্মাণের ভঙ্গি—এ সবকিছু তাঁর ছবির বিষয়ের সঙ্গে এক হয়ে গেছে৷ শিল্পীর ছবিতে প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেছেন নারী৷ নারীর বিবাহবন্ধন, সন্তান-সংসারের যত্ন, নিজের সৌন্দর্য পরিচর্যা, দৈনন্দিন গৃহস্থািল কর্ম, লাজুক নারীর পাখির সঙ্গে কথোপকথন, জল আনতে সখীর সঙ্গে নদীর ঘাটে যাওয়া ইত্যাদি গল্প বলতে বলতে পাশ্চাত্যের শিল্পকরণরীতির সঙ্গে কেমনভাবে যেন অনায়াসে যুক্ত হয়ে যান সমর মজুমদার৷ রঙের প্রয়োগ কোনো কোনো ক্যানভাসে পরিশীলিত, কোনো ক্যানভাসে অমসৃণ৷ চিত্রতল দৃষ্টিগ্রাহ্য করার কৌশল জানেন সমর৷ দর্শক তাঁর শিল্পকর্মে সে বার্তা পেয়ে যান৷ ৫৭টি কাজের মধ্যে অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে আঁকা ছবিই বৈচিত্র্যপূর্ণ৷ তাঁর কাজে নকশীকর্মের নিখুঁত পরিমিতির ছোঁয়া স্পষ্ট৷ এই শিল্পী আশির দশকের শুরুর দিকে আবির্ভূত হন শিল্পজগতে৷ স্বদেশ মাটি, আর ঐতিহ্যনির্ভর শিল্পকর্মের পথ ধরেই লোককলার আশ্রয়ে ক্যানভাস গড়েন তিনি৷ গত চার দশকে ধরে প্রকাশনাশিল্পে যুক্ত থাকার কারণে তাঁর ক্যানভাসে এক সরল রূপ ভর করেছে৷ এটি দর্শকের জন্য স্বস্তিদায়ক৷ তাঁর ছবিগুলোয় গল্প বলার ঢং আছে৷ সবগুলো ছবির শিরোনামই এক—‘সয়েল অ্যান্ড স্পিরিট’৷ ১৯ মার্চ শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী শেষ হয়েছে ২৫ মার্চ৷
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.