বিশ্বের প্রতি ১০ জন মানুষের ৯ জনেরই বাস এমন স্থানে যেখানে বাতাস দূষিত। দূষিত এই বায়ু প্রতিবছর লাখো মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা। খবরে বলা হয়, গতকাল প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন ওই প্রতিবেদন। বিশ্বের ৩ হাজার স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদন। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৯২ শতাংশ মানুষেরই বাস এমন এলাকায় যেখানকার বাতাসের মান সংস্থাটির নির্ধারিত মানের চেয়ে খারাপ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ মৃত্যুর সঙ্গে বাতাসের এই দূষণের যোগসূত্র রয়েছে। আর ঘরের ভেতরকার বাতাসের দূষণও সমান মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ২০১২ সালে, ৬৫ লাখ মানুষের (বিশ্বের মোট মৃত্যুর ১১.৬ শতাংশ) মৃত্যুর সঙ্গে ঘরের অভ্যন্তরের ও বাইরের বাতাসের দূষণের সম্পর্ক ছিল।’ সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে ঘটা মৃত্যুর বেশিরভাগই ছিল অসংক্রামক রোগ। এর মধ্যে রয়েছে কার্ডিওভাসকুলার রোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি ও ফুসফুসের ক্যান্সার। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর ৯০ শতাংশই মধ্য বা স্বল্প আয়ের দেশের নাগরিক। এর আবার দুই-তৃতীয়াংশের শিকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম প্রশান্ত এলাকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক ফ্লাভিয়া বুসত্রেও বলেন, ‘বায়ু দূষণ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর (নারী, শিশু, বয়স্ক) স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব অব্যাহত রেখেছে।’ সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরে এই সমস্যা সবচেয়ে প্রকট। তবে গ্রামাঞ্চলের অবস্থাও অনেকের ধারণার তুলনায় অনেক বেশি খারাপ। সংস্থাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান মারিয়া নেইরা বলেন, দূষণ কার্যত বিশ্বের সব দেশে এবং সমাজের সব অংশেরই ক্ষতি করছে। বায়ু দূষণ মোকাবিলায় দ্রুত কোনো উদ্যোগ শিগগিরই আসবে না বলে মনে করছেন তিনি। তবে সরকারগুলোর প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা যেন কমানো হয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যেন উন্নত হয় এবং রান্নায় নিরাপদ জ্বালানি যেন ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়। একইসঙ্গে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারকে ছড়িয়ে দেয়া ও শিল্প খাতের দূষণকারী গ্যাসের নির্গমন কমানোকেও বায়ু দূষণ রোধের সমাধান হিসেবে মনে করছেন তিনি। এর আগে গত মার্চে জাতিসংঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বাসিন্দাদের ৮০ শতাংশই বায়ু দূষণের মধ্যে রয়েছেন। তাতে আরও বলা হয়েছিল, স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর মাত্র ২ শতাংশ শহরে জাতিসংঘের নির্ধারিত মানের বাতাস বিদ্যমান। নেইরা বলেন, ‘শহরের বায়ু দূষণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপকভাবে হুমকিস্বরূপ।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.