১৭ই মে ১৯৯৮। ভারতের হায়দ্রাবাদে লাল শাস্ত্রী স্টেডিয়াম। কোকা-কোলা ট্রাইঙ্গুলার সিরিজে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কেনিয়া। আকরাম খানের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। এর মাঝে কেটে গেছে ১৮ বছর। বাংলাদেশ খেলে ফেলেছে ৩১৩টি ম্যাচ। এর মধ্যে জয় পেয়েছে ৯৯টিতে। আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেলে বাংলাদেশ স্পর্শ করবে ওয়ানডেতে গর্বের এক ল্যান্ডমার্ক। আজ জয় পেলে ওয়ানডেতে ১০০ জয় পূর্ণ হবে বাংলাদেশের। যার নেতৃত্ব দিবেন দেশের সেরা অধিনায়ক মাশরাফির বিন মুর্তজা। মাশরাফি অবশ্য ইতিহাসের কারণে নয় ম্যাচটি জিততে চান আরও একটু নির্ভার হতে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি ভীষণ কষ্টে জিততে হয়েছে। আর আজ জিতলেই এক ম্যাচ বাকি থাকতেই নিশ্চিত হয়ে যাবে সিরিজ। মাশরাফি বলেন, ‘আমি না থাকলে এই ম্যাচের নেতৃত্ব কেউ না কেউ দিতই। তবে হ্যা, এটি আমার জন্য অনেক বড় বিষয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন আর মাইল ফলক। আমরা চেষ্টা করবো শততম জয়টি যেন আজকের ম্যাচেই হয়। তার জন্য অবশ্যই আমাদের ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে। সেই সঙ্গে এই ম্যাচটি জিতলে আমরা সিরিজ জিতে আরও একটু নির্ভার থাকতে পারবো।’ আইসিসির সহযোগী দেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে মিরপুর শেরে বাংলা মাঠে টসে জিতে ২৬৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল মাশরাফি বাহিনী। লড়া্ই শেষে ৭ রানের জয় পায় মাশরাফি বাহিনী। এই বিষয়ে মাশরাফি ফের মনে করিয়ে দেন ১০ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নামার বিষয়টি। সেই সঙ্গে এমন লড়াকু জয় দেশের ক্রিকেটের জন্য শিক্ষাও বলে জানান তিনি। তবে তার মতে প্রথম ম্যাচ জয়ের পর এখন দ্বিতীয় ম্যাচের জন্য প্রস্তুত ও নির্ভার তার সৈনিকরা। মাশরাফি বলেন, ‘শেষ ম্যাচে আমাদের জন্য ভাল বিষয় ছিল যে প্রায় ৯৯ ভাগ ওদের (আফগানিস্তান) হাতে চলে যাওয়ার পরও জিততে পেরেছি। যেটি আমাদের জন্য সামনের ম্যাচ গুলোতে বিশেষ করে বড় ম্যাচে কাজে দিবে। আর একটি বিষয় হলো সিরিজের প্রথম ম্যাচে চাপ থাকে। আর সেই ম্যাচটি জিতে বের হয়ে যেতে পারলে পরে অনেকটাই নির্ভার হয়ে মাঠে নামা যায়। আমি বলবো আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমাদের কঠিন মুহূর্তটা চলে গেছে। এখন বলতে পারি কাল (আজ) ম্যাচটিতে আমরা মানসিকভাবে বেশ এগিয়ে থেকেই মাঠে নামবো।’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের আরও বড় স্কোর করার সুযোগ ছিল। ওপেনার তামিম ইকবাল ৮০ করে আউট হন। ক্রিজে মানিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত ৩৭ রানে উইকেট খোয়ান ইমরুল কায়েস। মাহমুদ্ল্লাহ ৬২ ও সাবিক আল হাসান ৪৮ রানে উইকেট দেন। সেট ব্যাটসম্যানরা আউট হওয়াতেই বড় সংগ্রহ হয়নি বলে মনে করেন অধিনায়ক মাশরাফিও। তাই দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের আরও সতর্ক হওয়ার পারামর্শ দিলেন অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি যে আমাদের আরও বেশি রান হতে পারতো প্রথম ম্যাচে। আমাদের সেট ব্যাটসম্যানরা যদি উইকেট দিয়ে না আসতো। তামিম ও মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরি করার সুযোগ ছিল। সাকিব ফিফটি করতে পারতো। কিন্তু হয়নি। আমার অনুরোধ থাকবে যেন সামনের ম্যাচে বিষয়গুলো ব্যাটসম্যানরা খেয়াল রাখে। যেন সেট হয়ে উইকেট দিয়ে না আসে।’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের ফিল্ডিংও ছিল ভীষণ করুণ। তিনটি ক্যাচ ছাড়া সহ মিসফিল্ডিংয়ে রানও দিয়েছেন বেশ কিছু। এই বিষয়ে মাশরাফি অবশ্য কোন অজুহাত দিতে চান না। তিনি বলেন, ফিল্ডিং নিয়ে অজুহাত দেওয়া কঠিন। এর জন্য খেলার মধ্যে থাকতে হবে, এমন কোনও বিষয় না। ফিল্ডিং এমন একটা ইস্যু, যা চাইলেই আপনি উন্নতি করতে পারেন। এটা কোনও অজুহাত হতে পারে না।’ প্রথম ম্যাচে ফিল্ডিং ভালো না হলেও পরের ম্যাচ থেকে ভালো ফিল্ডিং হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী মাশরাফি। তিনি বলেন ‘প্রথম ম্যাচে ভালো ফিল্ডিং হয়নি। আশা করি সামনের ম্যাচে এটা ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের অঙ্গভঙ্গি ঠিক ছিল না। যেটার কারণে একটু কষ্ট হচ্ছিল। এটা হয়; আমরা অনেক কিছু চাইছিলাম কিন্তু হচ্ছিল না। এর কারণে ফিল্ডিং খারাপ হতে পারে। প্রথম ম্যাচে হয়নি, দ্বিতীয় ম্যাচে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ অন্যদিকে আজ আফগানদের বিপক্ষে দলে কোন পরিবর্তন আসবে কিনা জানাননি মাশরাফি। তবে গুঞ্জন রয়েছে তরুণ ওপেনার সৌম্য সরকার বাদ পড়তে পারেন। এতে অভিষেক হতে পারে অপর তরুণ ব্যাটসম্যৗান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। এই বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘কাল (আজ) একাদশ কেমন হবে তা নিয়ে এখনও আমরা কথা বলিনি। আর আমি মনে করি না সৌম্যে শুরুর পারফরম্যান্স দেখে এখনের বাজে সময়ের সঙ্গে তুলনা করবেন। এটি তার প্রতি অবিচার করা হবে। আমি মনে করি সে ঠিক পথেই আছে। তাকে সুযোগ দিতে হবে।’ প্রথম ম্যাচে এক সময় মনে হয়ছিল বোলার শঙ্কটে ভুগছেন মাশরাফি। কিন্তু বিষয়টি সঠিক নয় বলেই জানালেন অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে বোলিংয়ের বিকল্প ছিল। মাহমুদুল্লাহ ও সাব্বির ছিল। কিন্তু আমি আসলে ওই মুহূর্তের্ ঝুঁকি নিতে চাইনি। যে কারণে দলের সেরা বোলারদেরই ব্যবহার করেছি।’ দুদিন বৃষ্টি হলেও মাঠ খেলার জন্য প্রস্তুত আছে বলেই জানিয়েছেন কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। তবে আজ উইকেট কেমন হবে তা তিনি বলতে চাননি। গামিনি বলেন, ‘মাঠ প্রস্তুত আছে। ম্যাচের দিন টানা বৃষ্টি না হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। উইকেট নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’ তবে প্রথম ম্যাচে হারের পরও বিচলিত নয় আফগান শিবির। তারা আজ জিতে সিরিজে ফিরতে প্রস্তুত। এই বিষয়ে আফগান স্পিনার রশিদ খান বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে যে ভুলগুলো হয়েছে তা শুধরে নিয়ে আমরা জয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা মনে করি আমাদের জয়ের সুযোগ আছে।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.