চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আগামী ১৪ অক্টোবর দু’দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। তার এ সফর আমাদের জন্য নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আশা করা হচ্ছে, চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ঋণ ঘোষণার চমক আসবে। দেশটির প্রেসিডেন্টের সফর সফল করতে চীনের অগ্রবর্তী দল ইতিমধ্যে ঢাকায় পৌঁছে কাজ শুরু করেছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি হবে। আশা করা হচ্ছে, শি জিনপিং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এ টানেল নির্মাণের ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবে। যে টানেল এতদিন চট্টগ্রামবাসীর কাছে ছিল স্বপ্ন তা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে, এটি অবশ্যই আনন্দের বিষয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ব্যাপক শিল্পায়ন হবে। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। আশা করা যায়, দেশটির সহযোগিতায় আমাদের দেশে আরও অনেক মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরকালে বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের সহায়তার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চীন বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। বঙ্গোপসাগরে এ গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে তা দেশের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এশিয়ার ক্ষমতা কেন্দ্র হিসেবে চীনের কাছে বর্তমানে প্রচুর নগদ অর্থ রয়েছে এবং দেশটির প্রযুক্তিগত সামর্থ্য বিস্ময়করভাবে বাড়ছে। বর্তমানে দেশটি বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ ঋণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশে সফরকালে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যেসব মেগা প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে, আশা করা যায় তা ফলপ্রসূ হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে চীনের নগদ সহায়তার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে সহায়তা পাওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ক আলোচনায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ব্যাপক শিল্পায়নের মাধ্যমে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে চীন বিশ্ববাসীর দৃৃষ্টি কেড়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দুই দেশেরই লাভবান হওয়ার যেসব সুযোগ রয়েছে, তা কাজে লাগানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ঈর্ষণীয় সাফল্যের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে চীন। চীনের প্রযুক্তি সহায়তা বৃদ্ধি পেলে আমাদের উপকৃত হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের সহায়তায় প্রযুক্তি খাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়লে তা দেশের টেকসই উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বস্তুত চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে দু’দেশের মধ্যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে আশা করা যায়। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকে আমরা স্বাগত জানাই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.