প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে চলতি বছর প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী (জেএসসি) পরীক্ষা চলাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কোচিং সেন্টারগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি এবং ফটোকপির দোকানও থাকবে বন্ধ। এসব ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে শেষ করার জন্য গঠন করা হবে ভ্রাম্যমাণ টিম। বিগত বছরের পিইসি’র সঙ্গে এবার জেএসসি পরীক্ষা নেয়ার দায়িত্ব পড়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর। এরই মধ্যে প্রায় সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছাপা কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বিজি প্রেসে গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন ফেসবুক বন্ধ রাখতে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) কর্মরত সার্ভার প্রোভাইডারকে সতর্ক থাকতে বিটিআরসিকে সুপারিশ করা হয়েছে। কোচিং সেন্টারগুলো কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে পরীক্ষার সময়। ফটোকপির দোকান বন্ধ রাখা হবে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশের ডিআইজি ও এসবিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব রোধে এর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি, বিভাগীয় উপ-পরিচালকদের পরীক্ষার কাজে সম্পৃক্ত রাখা হয়েছে। দেশের বাইরে ১০টি পরীক্ষা কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা শেষ করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ পরীক্ষা নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না দাবি করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, শিডিউল অনুযায়ী আমাদের কাজ এগিয়ে চলছে। মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে সে অনুযায়ী কাজ চলছে, কোনো সমস্যা নেই। মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, পিইসি ও এবতেদায়ী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র গত বছরের মতো এবারো একাধিক সেটের মাধ্যমে নেয়া হবে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পরীক্ষা শুরুর দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে কন্ট্রোল রুম চালু করা হবে। মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা কার্যক্রম তদারকি, সমন্বয় ও মনিটরিং করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ভ্রাম্যমাণ টিম গঠন করা হবে। পরীক্ষা চলাকালীন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এরই মধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার হলে কোমলমতি শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেক কেন্দ্রে একজন ডাক্তার/স্বাস্থ্য সহকারী উপস্থিত থাকতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ২৭ অথবা ২৮শে ডিসেম্বর ফলাফল ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়। এবছর পিইসি পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ৩৩ হাজার ট্যালেন্টপুল ও ৪৯ হাজার ৫শ’ জনকে সাধারণ কোটায় বৃত্তি দেয়া হবে। এবতেদায়ীতে ট্যালেন্টপুলে সাত হাজার ৫ শ’ ও সাধারণ কোটায় ১৫ হাজার জনকে বৃত্তি প্রদান করা হবে। এব্যাপারে পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। প্রশ্নপত্র ফাঁস বা গুজব ছড়ানো বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন ও প্রশ্নপত্র বিতরণের জন্য গত রোববার বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান জিয়াউল কবির দুলু বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সব সম্ভব। প্রশ্নফাঁস ঠেকানোর জন্য যে উদ্যাগ নিয়েছে তাকে স্বাগত জানাই, একই সঙ্গে এগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য শক্তিশালী মনিটরিং সেল এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছা খুব জরুরি। পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হলো: এদিকে জেএসসি পরীক্ষা ঘিরে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত তা দূর হলো। সমপ্রতি এই পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করাকে কেন্দ্র করে এ অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে গত ৩১শে আগস্ট পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে জেএসসি কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এতে জেএসসি পরীক্ষা বিষয়ে জারি করা পরিপত্র এবং সরকারের সিদ্ধান্ত কেন বাতিল করা হবে না তা-ও জানতে চাওয়া হয়। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে দুই শিক্ষা সচিবসহ ছয়জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দের করা রিট আবেদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ১০ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছিল। এই রিটের পর জেএসসি পরীক্ষা হবে কি হবে না, তা নিয়ে সংশয়ে ভুগেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিষয়টি আদালতে যাওয়ায় তাদের পড়ালেখাও বিঘ্নিত হয়। কিন্তু সরকারের শেষ পদক্ষেপে এই সংশয় দূর হয়েছে। এদিকে রিটকারী আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ বলেন, হাইকোর্টের বেঁধে দেয়া সময় ২৮শে নভেম্বর শেষ হলেও সরকারও এখন এর জবাব দেয়নি। তিনি বলেন, এখন কোর্ট বন্ধ থাকায় এই বিষয়ে কোনকিছু করা যাচ্ছে না। আগামী ১লা নভেম্বর থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং ২০শে নভেম্বর থেকে পিইসি ও এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে। শিক্ষানীতি অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হয়। যেকারণে এবার প্রথম বারের মতো জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজন করবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.