নয়াদিল্লিতে বিজিবি ও বিএসএফের ডিজি পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ দেশে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তার দাবি, তিনি বিএসএফের ডিজির কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন তার সংস্থার সদস্যরা কেন সীমান্তে মানবদেহের ঊর্ধ্বাংশে গুলি করে থাকে, যেখানে বিজিবির সদস্যরা প্রয়োজন পড়লে গুলি করে নিুাংশে। তিনি বিএসএফের ডিজিকে পরামর্শ দিয়েছেন, তার সদস্যরা আক্রান্ত হলে আÍরক্ষার্থে শরীরের মধ্যভাগের নিচে যেন গুলি করে। বিজিবির ডিজির এ আহ্বান অনুসরণযোগ্য নিশ্চয়ই। সীমান্তে কোনো জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হলে যদি গুলি করার একান্তই প্রয়োজন পড়ে, সেক্ষেত্রে শরীরের নিুাংশে গুলি করাই যথেষ্ট। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, বিএসএফের সদস্যরা শরীরের এমন জায়গায় গুলি করে, যা উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রাণনাশ ঘটায়। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হয়, যা মানবাধিকার চেতনাবিরোধী কাজ। আমরা আশা করব, বিএসএফের ডিজি বিজিবির ডিজির এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেভাবেই বিএসএফ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা নেবেন।
আমরা স্মরণ করছি, এই চলতি বছরেই সীমান্তে ২৫ বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২২ জনই নিহত হয়েছেন বিএসএফের গুলিতে। সংখ্যাটি উদ্বেগজনক। বিএসএফের দাবি, তারা আÍরক্ষার্থে নন-লিথাল অস্ত্র ব্যবহার করেন, যা প্রাণঘাতী হওয়ার কথা নয়। আমাদেরও প্রশ্ন, নন-লিথাল অস্ত্র ব্যবহার করা হলে ১০ মাসে ২২ জন অর্থাৎ মাসে গড়ে ২ জনেরও বেশি লোক মারা গেলেন কীভাবে? বিএসএফের ডিজির উচিত হবে তার দাবি কতটা সত্য তা বাস্তবে পরীক্ষা করে দেখা।
সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার যে উদ্বেগজনক চিত্র, তার প্রেক্ষাপটটি একটু পর্যালোচনা করা যেতে পারে। সীমান্ত হত্যার ৯৫ ভাগই গরু চোরাচালানকেন্দ্রিক। গরু চোরাচালানের সঙ্গে সোনা, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের বিষয়টিও সম্পর্কিত। অর্থাৎ গরু চোরাচালান রোধ করা গেলে অন্যান্য চালানেরও নিষ্পত্তি হতে পারে। এটাই বাস্তব যে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গরু আসে। অর্থাৎ গরু চোরাচালান বন্ধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষেরও করার অনেক কিছুই আছে। ভারতের সীমান্তবর্তী থানাগুলোর সঙ্গে গরু চোরাচালানের একটা যোগসাজশ রয়েছে, এ তো অনেক পুরনো তথ্য। দ্বিতীয় কথা, ভারত থেকে এদেশে সীমান্ত হয়ে ইয়াবা আসার বেশ কিছু প্রমাণ রয়েছে। কথা হচ্ছে, ভারত থেকে যদি ব্যাপকভাবে ইয়াবা বাংলাদেশে চোরাচালান হতে থাকে, তাহলে সেটা মোকাবেলা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।
সুখবরই বলতে হবে, ইন্দো-বাংলা বর্ডার নিরাপত্তা প্যানেল নামে একটি কমিটি গঠন করেছে ভারত। দেশটির সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মধুকর গুপ্ত এ কমিটির প্রধান। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চোরাচালানসহ অন্যান্য বিষয় চিহ্নিত করে আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার কথাও রয়েছে। আমরা আশা করব, এই কমিটি তাদের নিরপেক্ষ, বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি ও যথার্থ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরি করবে। তবে বিজিবি তথা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পর্যবেক্ষণগুলোও মূল্যবান। দুই দেশের কর্তৃপক্ষের সমঝোতামূলক মনোভাব থাকলে ভবিষ্যতে সীমান্তকেন্দ্রিক কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.