বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় স্থাপন করে বিদায় নিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। ঢাকা সফরকালে তিনি বলেছেন, সম্পর্কের এক টার্নিং পয়েন্ট অর্থাৎ নতুন মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে দুই দেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা জোগাতে চীন অনেক চুক্তি ও সমঝোতায়ও স্বাক্ষর করেছে।
আমরা মনে করি, চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফর বাংলাদেশের তরফে সন্তোষজনক শুধু নয়, নতুন অনেক আশারও সঞ্চার করেছে। যৌথ প্রকল্পের সুবাদে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সন্দেহ নেই, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নত হলে অর্থনৈতিক উন্নতির পালেও আরো জোরে হাওয়া লাগবে। তাই স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর কাজ দ্রুত শুরু করে অবশ্যই যথাসময়ে বাস্তবায়িত হতে হবে।
বর্তমান বিশ্বে একা চলার জো নেই। সহযোগিতার সম্পর্ক পারস্পরিক অর্থনীতিকে সমৃদ্ধই শুধু করে না, নতুন সম্ভাবনার সুযোগও তৈরি করে। আমাদের রয়েছে বিপুল শ্রমশক্তি, যা সত্যিকার অর্থে কাজে লাগানো গেলে জনসংখ্যা আর বোঝা থাকবে না। দক্ষতা, পরিশ্রম, জ্ঞান ও সততার সমাহার ঘটলে আমাদের জনসম্পদই হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ। স্বীকার করতে হবে, এই স্থানে আমাদের ভয়াবহ রকমের ঘাটতি রয়েছে। দুর্নীতি ও উন্নয়ন একসঙ্গে চলতে পারে না বলেই আমরা অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও আশানুরূপ গতিতে এগোতে পারছি না। বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়ার পরপরই দুর্নীতির আশঙ্কা আমাদের তাড়া করতে থাকে।
অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত হারে আসছে না। দুর্নীতি, অনিয়ম, অপেশাদারি, ব্যবসায়ের পরিবেশ বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারীর আগ্রহের ভাটার কারণ হচ্ছে। তবে আশার কথা, বর্তমান সরকার বিনিয়োগের নিরাপদ পরিবেশ সৃৎষ্টিতে নিরলস কাজ করছে। এর ফলে বহির্বিশ্বেও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে, তার সর্বশেষ প্রমাণ চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর ও দেশটির অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস। চীনের সঙ্গে সম্পাদিত দুই ডজনেরও বেশি চুক্তি অবশ্যই আমাদের বড় সাহস জোগাচ্ছে। চীনের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তখন অন্য বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে আসবে।
বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির দেশ চীন। এর পরও তারা থেমে নেই। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নামের উন্নয়নের মহাসড়ক গড়ে তারা বিশ্বকে আরো বিস্ময় উপহার দিতে চাইছে। মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে স্থান পাওয়া বাংলাদেশও ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তাই চীনসহ বড় পুঁজির অন্যান্য দেশের সহযোগিতা আমাদের লাগবেই। বিদেশি বিনিয়োগ আমরা তখনই কাঙ্ক্ষিত হারে পাব যখন অর্থনৈতিক কাঠামো নির্ভরযোগ্য হবে। এ জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিও স্থিতিশীল থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণের কোনো বিকল্প নেই।
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে দ্রুত শিল্পায়ন করতে হবে। সে কারণে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিশ্চয়তাসহ শিল্প বিকাশের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে চীনের অনেক সহযোগিতা বাংলাদেশ পেয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্টের ঐতিহাসিক সফর দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন চূড়ায় উন্নীত করেছে। আমাদের প্রত্যাশা, সূচিত প্রতিটি নতুন উদ্যোগ সফলভাবে শেষ হবে। এ কাজে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক মহলসহ সংশ্লিষ্ট সবার সদিচ্ছা ও সততা প্রত্যাশিত।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.