রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হচ্ছে। আমরা এ কাউন্সিলের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি। ৬৭ বছর পেরিয়ে আসা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল, যে দলের কাছে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা সব সময় বেশি। জাতীয় সংকটে এ দলটি সব সময় মানুষের পাশে থেকেছে। জনগণকে সংগঠিত করে পথ চলেছে। যদিও জন্মলগ্ন থেকেই শাসকগোষ্ঠীর শ্যেনদৃষ্টি পড়ে এ দলটির ওপর। আর তাই ৬৭ বছরে অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে দলটিকে। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের সামরিক শাসকচক্র দলটিকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বারবারই ধ্বংসস্তূপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ‘আওয়াম’ অর্থাৎ জনগণের দল। দলটির এই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে জনগণের ভালোবাসার কারণেই। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বাঙালির বড় বড় অর্জন এসেছে এই দলটির নেতৃত্বে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকা আওয়ামী লীগ ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের রাজনীতিতে মুসলিম লীগের কবর রচনায় নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তি সনদ ছয় দফা ঘোষণার ভেতর দিয়ে পাকিস্তানের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করেছিল। কিন্তু বাঙালির ভালোবাসা তাঁকে ফিরিয়ে আনে ফাঁসির দড়ি থেকে। উল্টো পাকিস্তানের ‘লৌহমানব’ আইয়ুব খানকেই সরে যেতে হয় শাসনক্ষমতা থেকে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সেদিনের রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ স্বাধীনতা শব্দটি বাঙালির প্রাণের শব্দে পরিণত করতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ। আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ—বাঙালি মহত্তর সব অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। দেশের মানুষকে নতুন পথের দিশা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
স্বাধীন বাংলাদেশেও এ দলটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার নানা রকম অপচেষ্টা হয়েছে। পাকিস্তান আমলের মতোই দলটির নেতাকর্মীদের ওপর জেল-জুলুম চালানো হয়েছে। কিন্তু পথের দিশা হারায়নি আওয়ামী লীগ। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা হাল ধরার পর নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দলটি। সামরিক শাসনের অবসানে বাংলাদেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা নতুন করে প্রবর্তনের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনামলে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে আলোচিত। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত বাংলাদেশ স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ—এমন স্বপ্নও জাতিকে আওয়ামী লীগ দেখাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই দলটির কাছে মানুষের প্রত্যাশা বাড়ছে। এ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব, যা নির্বাচন করবে এই কাউন্সিল। আমরা আশা করব, এই কাউন্সিলের ভেতর আওয়ামী লীগ পাবে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সেই নেতৃত্ব।
সফল হোক আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.