বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশন গতকাল শেষ হয়েছে। শেখ হাসিনা আবারও দলের সভাপতি এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্থলে ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বকে আমাদের অভিনন্দন জানাই।
এবারের জাতীয় সম্মেলনে দলীয় প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে জনগণের কাছে যাওয়ার এবং তাদের কল্যাণে কাজ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ জনগণের ভেতর থেকে উঠে আসা একটি রাজনৈতিক দল। উপমহাদেশের রাজনীতির দিকে তাকালে আওয়ামী লীগের জন্য এটা বড় অর্জন। একবিংশ শতাব্দীতে এসে রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমেও পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সেই পরিবর্তনের সঙ্গী করতে চান দলীয় প্রধান। তাঁর বক্তব্যে সে কথাই উঠে এসেছে। আওয়ামী পথপরিক্রমার ইতিহাসের পাশাপাশি দলের টিকে থাকার সংগ্রামের কথা বলেছেন তিনি। দিয়েছেন আগামী দিনের দিকনির্দেশনা।
সম্ভাবনার বাংলাদেশে সমস্যাও কম নয়। দারিদ্র্যজয়ের গল্প শুনতে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ঘুরে গেলেও আমাদের মানতে হবে দেশের অসংখ্য মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এমডিজি অর্জিত হয়েছে। সামনে রয়েছে এসডিজির চ্যালেঞ্জ, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে কি না ভেবে দেখতে হবে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা যে একটি দেশকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, বাংলাদেশ তার প্রমাণ। যদিও এখনই তৃপ্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে তাই সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। গঠনমূলক কর্মসূচি নিয়ে কাজ করতে হবে। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নিজ নিজ এলাকায় দরিদ্র, গৃহহীন মানুষের তালিকা করতে বলেছেন তিনি। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এই গৃহহীন মানুষকে বিনা পয়সায় ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। জনগণের সংগঠন হিসেবে এটিকে দলের দায়িত্ব বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। একটি রাজনৈতিক দল শুধু ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না, জনকল্যাণও যে তার লক্ষ্য হতে পারে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বক্তব্যে সে কথাই উঠে এসেছে।
জনকল্যাণই সব রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য হওয়া উচিত। কল্যাণব্রতে দীক্ষা নিলে যেকোনো রাজনৈতিক দলই যে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শেখ হাসিনার আহ্বানে তাঁর দলের নেতাকর্মীরা সাড়া দিয়ে কাজ করলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বদলে যাবে। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী দলীয় প্রধানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনকল্যাণে ব্রতী হবেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.