বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অবিস্মরণীয় জয় বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। র্যাংকিংয়ের তলানিতে থাকা দলটিকে এখন আর উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকও বলেছেন, দেশের মাটিতে বাংলাদেশ দলকে হারানো কঠিন। তিনি স্বীকার করেছেন, কিছু কিছু ব্যাপার খেলার চেয়ে বড়। অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট দেখে আবেগ দিয়ে। খেলার মাঠে তার বহিঃপ্রকাশও দেখেছি আমরা। এমন দর্শক আর কোনো মাঠে বোধ হয় পাওয়া যাবে না। ১৫ মাস পর মাঠে নেমে প্রথম টেস্টে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও পরাজয় বরণ করা বাংলাদেশ ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টে ক্রিকেট পরাশক্তি ইংল্যান্ডকে তৃতীয় দিনেই পরাজিত করেছে। দলগত খেলা ক্রিকেটে সব ডিপার্টমেন্টেই খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখাতে হয়। তা করে দেখিয়েছেন আমাদের খেলোয়াড়রা।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে আগমনী বার্তা জানিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। নিজেদের শততম ওয়ানডে ম্যাচে ভারতকে হারানো, কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিজয়, ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো, নিউজিল্যান্ডকে দুই দফায় হোয়াইটওয়াশ করা, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা, গত বছর টানা তিন ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো—এ সবই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের স্মরণীয় অধ্যায়। টেস্ট ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সব ছাপিয়ে টেস্ট র্যাংকিংয়ের ৪ নম্বরে থাকা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট জেতা আমাদের জন্য এক অনন্য মাইলফলক।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের এই সিরিজে বাংলাদেশ দলের প্রাপ্তি অনেক। দলে নতুন খেলতে আসা মেহেদী হাসান মিরাজ যে রেকর্ড গড়েছেন, তা অনন্য। এই সিরিজে বেশ কয়েকজন নতুন খেলোয়াড় দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন তাঁরা। প্রতিপক্ষকে ভয় না পেলে জয় অবশ্যম্ভাবী, তা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টের মতো দ্বিতীয় টেস্টেও ম্যাচ দুলছিল পেন্ডুলামের মতো। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড দলের দুই ওপেনার খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। চা-বিরতির পরই পাল্টে যায় ম্যাচের চেহারা। বাংলাদেশ ফিরে আসে। চট্টগ্রাম টেস্টে শুধু অভিজ্ঞতার কাছে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায়। ম্যাচ নিজেদের করে নিতে সময় লাগেনি।
দুই টেস্টেই উজ্জীবিত ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে চাই ‘বিগ ম্যাচ টেম্পারামেন্ট’। অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশকে আরো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আরো বেশি বেশি টেস্ট খেলা। আইসিসি এর পর থেকে বাংলাদেশকে আরো বেশি বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ দেবে বলে আমরা আশা করছি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.