নিহত শরৎ সন্ধান
(শামসুর রাহমানকে স্মরণপূর্বক)
দেয়ালের ক্যালেন্ডারে সেপ্টেম্বরের ভিড়ের মধ্যে
আশ্বিন লেপ্টে আছে পিঁপড়ের মতন ক্ষীণদেহে।
জানালার ফাঁক গলিয়ে বাইরে তাকালাম; স্নেহে
হায়! কবিতায় নয়; প্রকৃতি তাকিয়ে আছে গদ্যে!
অতঃপর ঘর ছেড়ে বাইরে; বাহির পথে নদী।
সে তো জলের মেয়ে; নদীতেই পেয়ে যাই যদি!
ছন্ন প্রেমিকের মতো তন্নতন্ন খুঁজলাম তাকে।
পুবে নেই; পশ্চিমেও নেই; তবে কোথায় সে থাকে?
রাহমান নেই; আকাশের সাগরে নেই হাঁসও
শুভ্র সে চুলের মতন, হারিয়েছে শাদা কাশও,
শিউলি-ভোরের বালিকারা আর আসে না অঙ্গনে
প্রজন্মের পাঠাভ্যাস হয়ে শরৎও দিন গোনে!
শরতের পরতে পরতে দেখি : শ্রাবণের ক্ষত
শ্রাবণেরই প্লাবন বনে, শরৎ-হরিণী হত!
তোর আর ফেরবার দরকার নেই, অপু
(উৎসর্গ : অনন্য শারদ-জাতক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়)
না রে ! এখানে এখন কোনো কাশ নেই
ঘাস নেই আদিগন্ত ভূমে।
চুমে সবুজ প্রান্তর, আকাশ থাকে না ছাদ হয়ে,
ফাঁদ হয়ে মানুষের দৃষ্টিকে আটকে রাখে না সে;
হাসে না নদীর জলে আলোর বিকেল!
যে মাঠে দাঁড়িয়ে কাশের কেশর ছুঁয়ে
নুয়েছিলি তুই, সেই মাঠ মরে গেছে
জেগেছে সেখানে আজ কঙ্ক্রিটের হিমালয় সারি
পারি না দেখতে কোনো শাদা মেঘমালা
জ্বালা করে চোখ; ভার্চুয়াল পৃথিবী উদ্বেল!
না রে, তোর আর ফেরবার দরকার নেই, অপু!
দুর্গাকেও নিষেধ করে দিস আসতে
বলে দিস, আজকাল বোঝাই যায় না
বাংলার হাভভাব; মানুষ চায় না আর হাসতে!
ভ্যাবাচ্যাকা একুশ শতকে
(নিবেদন : আগামীর শিশুদের প্রতি)
ফটিকের জন্যে কোনো ঘরবাড়ি নেই;
সব ইট-বালি-সিমেন্টের কারাগারে অন্তরীণ
ইংরেজি মাধ্যম নামের পরবিদ্যা রন্ধনের চুলোয়
পুড়ে যাচ্ছে সোনালি শৈশব; ধুলো-কাদামাখা দিন।
অতএব, ক্যালেন্ডারে যেটাই থাকুক,
যা-ই বলুক না লোকে
শরৎকে এখানে খুঁজো না বাবা,
ভ্যাবাচ্যাকা একুশ শতকে!
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.